পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○ O গল্পগুচ্ছ নবাবপত্রী কহিলেন, “আমাদের কেল্লা যমনার তীরে। আমাদের ফৌজের অধিনায়ক ছিল একজন হিন্দ ব্রাহরণ। তাহার নাম ছিল কেশরলাল।” রমণী এই কেশরলাল শব্দটির উপর তাহার নারীকন্ঠের সমস্ত সংগীত যেন একেবারে এক মহতে উপড় করিয়া ঢালিয়া দিল । আমি ছড়িটা ভূমিতে রাখিয়া নড়িয়া-চড়িয়া খাড়া হইয়া বসিলাম । “কেশরলাল পরম হিন্দ ছিল। আমি প্রত্যহ প্রত্যুষে উঠিয়া অন্তঃপুরের গবাক্ষ হইতে দেখিতাম, কেশরলাল আবক্ষ যমনার জলে নিমগ্ন হইয়া প্রদক্ষিণ করিতে করিতে জোড়করে উধামুখে নবেদিত সমযের উদ্দেশে অঞ্জলি প্রদান করিত। পরে সিগুবসে ঘাটে বসিয়া একাগ্রমনে জপ সমাপন করিয়া পরিকার সকণ্ঠে ভৈরোঁরাগে ভজনগান করিতে করিতে গহে ফিরিয়া আসিত। আমি মুসলমানবালিকা ছিলাম কিন্তু কখনও সবধমের কথা শুনি নাই এবং সবধর্মসংগত উপাসনাবিধিও জানিতাম না ; তখনকার দিনে বিলাসে মদ্যপানে স্বেচ্ছাচারে আমাদের পর ষের মধ্যে ধর্মবন্ধন শিথিল হইয়া গিয়াছিল এবং অন্তঃপুরের প্রমোদ ভবনেও ধম সজীব ছিল না। বিধাতা আমার মনে বোধকরি সবাভাবিক ধমপিপাসা দিয়াছিলেন । অথবা আরকোনো নিগঢ় কারণ ছিল কি না বলিতে পারি না। কিন্তু প্রত্যহ প্রশান্ত প্রভাতে নবোন্মেষিত অর্ণালোকে নিস্তরঙ্গ নীল যমুনার নিজন শ্বেত সোপানতটে কেশরলালের প্রজাচনাদশ্যে আমার সদ্যসাতোথিত আন্তঃকরণ একটি অব্যন্ত ভৰিমাধযে পরিপলত হইয়া যাইত। নিয়ত সংযত শািন্ধাচারে ব্রাহরণ কেশরলালের গৌরবণ প্রাণসীর সন্দের তন, দেহখানি ধমলেশহীন জ্যোতিঃশিখার মতো বোধ হইত , ব্রাহরণের পণ্যমাহাত্ম্য অপর শ্রদ্ধাভরে এই মসলমানদুহিতার মঢ়ে হৃদয়কে বিনম্ন করিয়া দিত। আমার একটি হিন্দ বাঁদি ছিল, সে প্রতিদিন নত হইযা প্রণাম করিয়া কেশরলালের পদধলি লইয়া আসিত, দেখিয়া আমার আনন্দও হইত ঈষাও জন্মিত । ক্লিয়াকমপাবণ উপলক্ষ্যে এই বন্দিনী মধ্যে মধ্যে ব্রাহ্মণভোজন করাইয়া দক্ষিণা দিত । আমি নিজে হইতে তাহাকে অথসাহায্য করিয়া বলিতাম, “তুই কেশরললকে নিমন্ত্ৰণ করিলি না ? সে জিভ কাটিয়া বলিত কেশরলালঠাকুর কাহারও অন্নগ্ৰহণ বা দানপ্রতিগ্রহ করেন না ।” এইরপে প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে কেশরলালকে কোনোরপে ভক্তিচিহ্ন দেখাইতে ন; পারিয়া আমার চিত্ত যেন ক্ষুব্ধ ক্ষুধাতুর হইয়া থাকিত। আমাদের পবিপরীষের কেহ-একজন একটি ব্রাহরণকল্যাকে বলপবেক বিবাহ করিয়া আনিয়াছিলেন, আমি অতঃপরের প্রান্তে বসিয়া তাঁহারই পগোরক্সপ্রবাহ আপন শিরার মধ্যে অনুভব করিতাম, এবং সেই রক্তস ত্রে কেশরলালের সহিত একটি ঐক্যসম্মবন্ধ কল্পনা করিয়া কিয়ৎপরিমাণে তৃপ্তি বোধ হইত। আমার হিন্দ দাসীর নিকট হিন্দধমের সমস্ত আচার ব্যবহার, দেবদেবীর সমস্ত আশ্চর্য কাহিনী, রামায়ণ-মহাভারতের সমস্ত অপাব ইতিহাস তন্ন তন্ন করিয়া শানিতাম, শনিয়া সেই অতঃপরের প্রান্তে বসিয়া হিন্দজগতের এক অপরাপ দশা আমার মনের সম্মখে উম্বাটিত হইত। মতি প্রতিমতি শগ্ৰঘণ্টাধানি, বগচড়াখচিত