পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b3 গল্পগুচ্ছ পালিত আত্মীয়স্বজনদিগকে এই প্রলয়সংকটে বিচলিত হইতে দেয় নাই, ইহা সে চিন্তা করিয়া চুপ করিয়া রহিল। তার পরে সে চারার কথা ভাবিল, নিজের কথা ভাবিল, কণমল লোহিত হইয়া উঠিল, সবেগে বলিল, “চুলোয় যাক আষাঢ়ের চাঁদ আর অমাবস্যার আলো। আমি ব্যারিস্টার হয়ে এসে দাদাকে যদি সাহায্য করতে পারি তবেই আমি পর্যষমানষে।” গত রাত্রি সমস্ত রাত জাগিয়া চার ভাবিয়া রাখিয়াছিল, অমলকে বিদায়কালে কী কথা বলিবে—সহাস্য অভিমান এবং প্রফুল্ল ঔদাসীন্যের বারা মাজিয়া মাজিয়া সেই কথাগুলিকে সে মনে-মনে উজল ও শানিত করিয়া তুলিয়াছিল। কিন্তু বিদায় দিবার সময় চাররে মুখে কোনো কথাই বাহির হইল না। সে কেবল বলিল, “চিঠি লিখবে তো, অমল ?” অমল ভূমিতে মাথা রাখিয়া প্রণাম করিল, চার ছটিয়া শয়নঘরে গিয়া বার বন্ধ कद्रिक्षा मिळ । রয়োদশ পরিচ্ছেদ ভূপতি বধমানে গিয়া অমলের বিবাহ-অন্তে তাহাকে বিলাতে রওনা করিয়া ঘরে ফিরিয়া আসিল । নানা দিক হইতে ঘা খাইয়া বিশ্বাসপরায়ণ ভূপতির মনে বহিঃসংসারেব প্রতি একটা বৈরাগ্যের ভাব আসিয়াছিল। সভাসমিতি মেলামেশা কিছুই তাহার ভালো লাগিত না । মনে হইল, “এই-সব লইয়া আমি এতদিন কেবল নিজেকেই ফাঁকি দিলাম— জীবনের সখের দিন ব্যথা বহিয়া গেল এবং সারভাগ আবর্জনাকুণ্ডে ফেলিলাম।” ভূপতি মনে-মনে কহিল, “যাক, কাগজটা গেল, ভালোই হইল। মন্তিলাভ করিলাম।” সন্ধ্যার সময় অাঁধারের সত্রপাত দেখিলেই পাখি যেমন করিয়া নীড়ে ফিরিয়া আসে, ভূপতি সেইরাপ তাহার দীর্ঘদিনের সঞ্চরণক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়া অন্তঃপরে চারার কাছে চলিয়া আসিল। মনে-মনে স্থির করিল, “বাস, এখন আর কোথাও নয় ; এইখানেই আমার স্থিতি। যে কাগজের জাহাজটা লইয়া সমস্ত দিন খেলা করিতাম সেটা ডুবিল, এখন ঘরে চলি।” বোধ করি ভূপতির একটা সাধারণ সংস্কার ছিল—সীর উপর অধিকার কাহাকেও অজ’ন করিতে হয় না, সত্ৰী ধবেতারার মতো নিজের আলো নিজেই জবালাইয়া রাখে— হাওয়ায় নেবে না, তেলের অপেক্ষা রাখে না। বাহিরে যখন ভাঙচুর আরম্ভ হইল তখন অন্তঃপরে কোনো খিলানে ফাটল ধরিয়াছে কি না তাহা একবার পরখ করিয়া দেখার কথাও ভূপতির মনে সথান পায় নাই। ভূপতি সন্ধ্যার সময় বধমান হইতে বাড়ি ফিরিয়া আসিল। তাড়াতাড়ি মাখহাত ধইয়া সকাল-সকাল খাইল। অমলের বিবাহ ও বিলাতযাত্রার আদ্যোপাত বিবরণ শনিবার জন্য স্বভাবতই চার একান্ত উৎসকে হইয়া আছে স্থির করিয়া ভূপতি আজ কিছমাত্র বিলম্ব করিল না। ভূপতি শোবার ঘরে বিছানায় গিয়া শইয়া গড়গড়ির সদীঘ নল টানিতে লাগিল। চার এখনও অনুপস্থিত, বোধ করি গহকাব করিতেছে।