পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

म•fङ्ग्रण ' &O's না করিয়া ব্যাকুলভাবে আমার হাত চাপিয়া ধরিল। কহিল, “তুমি পাগল হইয়াছ ? না না, সেখানে তুমি যাইতে পরিবে না!” আমি কহিলাম, “রাজপত-নারী বন্ধসাজ পরাইয়া স্বামীকে রণক্ষেত্রে পঠাইয়া দিত—আর বাঙালির মেয়ে কি বস্তৃতাসভাতেও পাঠাইতে পারে না।” নিঝরিণী কহিল, “ইংরাজি বস্তৃতা হইলে আমি ভয় করিতাম না, কিন্তু— থাক-না, অনেক লোক আসিবে, তোমার অভ্যাস নাই—শেষকালে—” শেষকালের কথাটা আমিও কি মাঝে মাঝে ভাবি নাই। রামমোহন রায়ের গানটা মনে পড়িতেছিল— মনে করো শেষের সে দিন ভয়ংকর, অন্যে বাক্য কবে কিন্তু তুমি রবে নিরক্তের। বক্তার বস্তৃতা-অন্তে উঠিয়া দাঁড়াইবার সময় সভাপতি যদি হঠাৎ দষ্টিহীন নাড়ীক্ষীণ হিমকলেবর অবস্থায় একেবারে নিরক্তের হইয়া পড়েন তবে কী গতি হইবে। এই-সকল কথা চিন্তা করিয়া পাবোন্ত পলাতক সভাপতিমহাশয়ের চেয়ে আমার বাস্থ্য যে কোনো অংশে ভালো ছিল, এমন কথা আমি বলিতে পারি না । বকে ফলাইয়া সাঁকে কহিলাম, “নিঝর, তুমি কি মনে কর— ” সী কহিল, “আমি কিছই মনে করি না, কিন্তু আমার আজ ভারি মাথা ধরিয়া আসিয়াছে, বোধ হয় জর আসিবে, তুমি আজ আমাকে ফেলিয়া যাইতে পারিবে না।” আমি কহিলাম, “সে আলাদা কথা। তোমার মুখটা একট লাল দেখাইতেছে বটে।” সেই লালটা সভাসথলে আমার দরবস্থা কম্পনা করিয়া লক্ষজায়, অথবা আসন্ন জহরের আবেশে, সে কথা নিঃসংশয়ে পযালোচনা না করিয়াই আমি ক্লাবের সেক্রেটারিকে সত্রীর পীড়ার কথা জানাইয়া নিম্প্রকৃতিলাভ করিলাম। বলা বাহুল্য, সীর জরভাব অতি সত্বর ছাড়িয়া গেল। আমার অন্তরাত্মা কহিতে লাগিল, “আর সব ভালো হইল, কিন্তু তোমার বাংলা বিদ্যা সম্বন্ধে তোমার সীর মনে এই-যে সংস্কার, এটা ভালো নয়। তিনি নিজেকে মস্ত বিদষী বলিয়া ঠাওরাইয়াছেন— কোনদিন-বা মশারির মধ্যে নাইট-স্কুল খালিয়া তিনি তোমাকে বাংলা পড়াইবার চেষ্টা করিবেন।” আমি কহিলাম, "ঠিক কথা। এই বেলা দপ চণ না করিলে ক্লমে আর তাহার নাগাল পাওয়া যাইবে না।” সেই রাত্রেই তাহার সঙ্গে একটা খিটিমিটি বাধাইলাম। অল্পশিক্ষা যে কিরাপ ভয়ংকর জিনিস, পোপের কাব্য হইতে তাহার উদাহরণ উদ্ধার করিয়া তাহাকে শনাইলাম। ইহাও বঝোইলাম, কোনোমতে বানান এবং ব্যাকরণ বাঁচাইয়া লিখিলেই ষে লেখা হইল তাহা নহে— আসল জিনিসটা হইতেছে আইডিয়া। কাশিয়া বলিলাম, "সেটা উপক্ৰমণিকায় পাওয়া যায় না, সেটার জন্য মাথা চাই।” মাথা যে কোথায় আছে, সে কথা তাহাকে স্পষ্ট করিয়া বলি নাই, কিন্তু তব বোধ হয়, কথাটা অস্পষ্ট ছিল না। আমি কহিলাম, “লিখিবার যোগ্য কোনো লেখা কোনো দেশে কোনোদিন কোনো সত্ৰীলোক লেখে নাই।” শনিয়া নিঝরিণীর মেয়েলি তাকিকতা চড়িয়া উঠিল। সে বলিল, “কেন মেয়েরা লিখিতে পারবে না। মেয়েরা এতই কি হীন।”