পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

68२ গল্পগুচ্ছ সতীশ । তোমাকে তো দিই নি, মেসোমশায়। এ মাসিমার ঋণশোধ। তোমার ঋণ কোনো কালে শোধ করতে পারব না । শশধর। কী স্কু, এ টাকাগুলো— সকুমারী। গানে খাতান্টির হাতে দাও-না— ওইখানেই কি ছড়ানো পড়ে থাকবে। শশধর । সতীশ, খেয়ে এসেছ তো ? সতীশ । বাড়ি গিয়ে খাব। শশধর। অ্যাঁ, সে কী কথা। বেলা যে বিস্তর হয়েছে। আজ এইখানেই খেয়ে যাও । সতীশ । আর খাওয়া নয়, মেসোমশায়। এক দফা শোধ করলেম, অন্ন-ঋণ আবার নতন করে ফাঁদতে পারব না। প্রশথান সকুমারী। বাপের হাত হতে রক্ষা করে এতদিন ওকে খাইয়ে-পরিয়ে মানুষ করলেম, আজ হাতে দ-পয়সা আসতেই ভাবখানা দেখেছ ! কৃতজ্ঞতা এমনিই বটে ! ঘোর কলি কিনা। অন্টাদশ পরিচ্ছেদ সতীশ । বড়োসাহেব হিসাবের খাতাপত্র কাল দেখবেন। মনে করেছিলেম, ইতিমধ্যে গানির টাকাটা নিশ্চয় পাওয়া যাবে, তহবিল পরণ করে রাখব—কিন্তু বাজার নেমে গেল। এখন জেল ছাড়া গতি নেই। ছেলেবেলা হতে সেখানে যাবারই আয়োজন করা গেছে। কিন্তু, অদষ্টকে ফাঁকি দেব। এই পিস্তলে দটি গলি পরেছি— এই যথেষ্ট। নেলি—না না, ও নাম নয়, ও নাম নয়— আমি তা হলে মরতে পারব না। যদি বা সে আমাকে ভালোবেসে থাকে, সে ভালোবাসা আমি ধুলিসাৎ করে দিয়ে এসেছি। চিঠিতে আমি তার কাছে সমস্তই কবলে করে লিখেছি। এখন পথিবীতে আমার কপালে যার ভালোবাসা বাকি রইল সে আমার এই পিস্তল । আমার অন্তিমের প্রেয়সী, ললাটে তোমার চুম্বন নিয়ে চক্ষ মন্দব। মেসোমশায়ের এ বাগানটি আমারই তৈরি। যেখানে যত দলভ গাছ পাওয়া যায় সব সংগ্রহ করে এনেছিলেম। ভেবেছিলেম, এ বাগান একদিন আমারই হবে। ভাগ্য কার জন্য আমাকে দিয়ে এই গাছগুলো রোপণ করে নিচ্ছিল, তা আমাকে তখন বলে নি—তা হোক, এই ঝিলের ধারে এই বিলাতি স্টিফানোটিস লতার কুঞ্জে আমার এ জন্মের হাওয়া-খাওয়া শেষ করব—মৃত্যুর বারা আমি এ বাগান দখল করে নেব—এখানে হাওয়া খেতে আসতে আর কেউ সাহস করবে না। মেসোমশায়কে প্রণাম করে পায়ের ধলো নিতে চাই। পথিবী হতে ওই ধলোটাকু নিয়ে যেতে পারলে আমার মৃত্যু সাথীক হত। কিন্তু, এখন সন্ধ্যার সময় তিনি মাসিমার কাছে আছেন—আমার এ অবস্থায় মাসিমার সঙ্গে দেখা করতে আমি সাহস করি নে। বিশেষত পিস্তল ভরা আছে। মরবার সময় সকলকে ক্ষমা করে শান্তিতে মরার উপদেশ শাসে আছে । কিন্তু,