পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ c 。 গল্পগুচ্ছ হরলালকে কহিল, “মাস্টারমশায়, এই আংটিঘড়িগলা বাগানে লইয়া যাওয়া নিরাপদ নয়। আপনার কাছেই রাখিয়া যাই, ফিরিয়া আসিয়া লইয়া যাইব । আপনার দরোয়ানকে বলিয়া দিন, আমার গাড়ি হইতে চামড়ার হ্যাণ্ডব্যাগটা আনিয়া দিক। সেইটের মধ্যে এগলা রাখিয়া দিই।” আপিসের দরোয়ান গাড়ি হইতে ব্যাগ লইয়া আসিল । বেণ তাহার চেন ঘড়ি আংটি বোতাম সমস্ত খালিয়া ব্যাগের মধ্যে পরিয়া দিল। সতক হরলাল সেই ব্যাগটি লইয়া তখনই আয়রন-সেফের মধ্যে রাখিল । বেণ হরলালের মার পায়ের ধলা লইল। তিনি রন্ধকন্ঠে আশীবাদ করিলেন, “মা জগদম্ববা তোমার মা হইয়া তোমাকে রক্ষা করন।" তাহার পরে বেণ হরলালের পাদপশ করিয়া প্রণাম করিল। আর-কোনো দিন সে হরলালকে এমন করিয়া প্রণাম করে নাই। হরলাল কোনো কথা না বলিয়া তাহার পিঠে হাত দিয়া তাহার সঙ্গে সঙ্গে নীচে নামিয়া আসিল । গাড়িব লন্ঠনে আলো জলিল, ঘোড়া দটা অধীর হইয়া উঠিল। কলিকাতার গ্যাসালে কখচিত নিশীথের মধ্যে বেণকে লইয়া গাড়ি অদশ্য হইয়া গেল। হরলাল তাহার ঘরে আসিয়া অনেকক্ষণ ধরিযা চুপ করিয়া বসিয়। রহিল। তাহার পর একটা দীঘনিশবাস ফেলিয়া টাকা গনিতে গনিতে ভাগ করিয়া এক-একটা থলিতে ভরতি করিতে লাগিল। নোটগলো পরেই গনা হইযা থলিবন্দি হইয়া লোহার সিন্দাকে উঠিয়াছিল। $ 3. লোহার সিন্দকের চাবি মাথার বালিশের নীচে রাখিয়া সেই টাকার ঘরেই হরলাল অনেক রাত্রে শয়ন করিল। ভালো ঘমে হইল না। ১লনে দেখিল— বেণর মা পদার আড়াল হইতে তাহাকে উচ্চস্বরে তিরস্কার করিতেছেন ; কথা কিছুই সপস্ট শনা যাইতেছে না, কেবল সেই অনিদিষ্ট কন্ঠস্বরের সঙ্গে সঙ্গে বেণর মীর চুনি-পাল্ল - হীরার অলংকার হইতে লাল সবজে শত্র রশ্মির সচিগলি কালে পদ’টাকে ফড়িয়া বাহির হইয়া আন্দোলিত হইতেছে। হরলাল প্রাণপণে বেণকে ডাকিবার চোটা করিতেছে, কিন্তু তাহার গলা দিয়া কিছুতেই বর বাহির হইতেছে না। এমন সময় প্রচণ্ড শব্দে কী একটা ভাঙিয়া পদ ছি’ড়িষা পড়িয়া গেল-- চমকিয়া চোখ মেলিয়া হরলাল দেখিল একটা সতপোকার অন্ধকার । হঠাৎ একটা নমক হাওযা উঠিয়া সশব্দে জানলায় ঠেলা দিয়া আলো নিবাইয়া দিয়াছে। হরলালের সমস্ত শরীর ঘামে ভিজিলা গেছে। সে তাড়াতাড়ি উঠিয়া দেশালাই দিয়া আলো জালিল। ঘড়িতে দেখিল চারটি বাজিয়াছে। আর ঘুমাইবার সময় নাই— টাকা লইয়া মফস্বলে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে। হরলাল মুখ ধুইয়া ফিরিবার সময় মা তাঁহার ঘর হইতে কহিলেন, "কী বাবা, উঠিয়াছিস ?” *, হরলাল প্রভাতে প্রথমে মাতার মঙ্গলমুখ দেখিবার জন্য ঘরে প্রবেশ করিল। মা তাহার প্রণাম লইয়া মনে-মনে তাহাকে আশীবাদ করিয়া কহিলেন, “বাবা, আমি এইমাত্র