পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रानर्माकग्न प्रदान «ve শ্যামাচরণ নিজের ছেলেদের কঠোর শাসনে রাখতেন। কিন্তু ভবানীচরণের পরে তাহার কোনো শাসনই ছিল না। ইহা দেখিয়া সকলেই একবাক্যে বলিত, নিজের ছেলেদের চেয়ে ভবানীর প্রতিই তাঁহার বেশি স্নেহ । এমনি করিয়া ভবানীর পড়াশনা কিছুই হইল না। এবং বিষয়বন্ধি সম্বন্ধে চিরদিন শিশর মতো থাকিয়া দাদার উপর সম্পণে নিভয় করিয়া তিনি বয়স কাটাইতে লাগিলেন। বিষয়কমে তাঁহাকে কোনোদিন চিন্তা করিতে হইত না— কেবল মাঝে মাঝে এক-একদিন সই করিতে হইত। কেন সই করিতেছেন তাহা বুঝিবার চেষ্টা করিতেন না; কারণ, চেষ্টা করিলে কৃতকাষ" হইতে পারিতেন না। এ দিকে শ্যামাচরণের বড়ো ছেলে তারাপদ সকল কাজে পিতার সহকারীরপে থাকিয়া কাজে কমে পাকা হইয়া উঠিল। শ্যামাচরণের মৃত্যু হইলে পর তারাপদ ভবানীচরণকে কহিল, “খড়ামহাশয়, আমাদের আর একত্র থাকা চলিবে না। কী জানি কোনদিন সামান্য কারণে মনান্তর ঘটিতে পারে, তখন সংসার ছারখার হইয়া যাইবে।” পথক হইয়া কোনোদিন নিজের বিষয় নিজেকে দেখিতে হইবে, এ কথা ভবানী স্বপ্নেও কল্পনা করেন নাই। যে সংসারে শিশুকাল হইতে তিনি মানুষ হইয়াছেন সেটাকে তিনি সম্পর্ণে অখণ্ড বলিয়াই জানিতেন— তাহার যে কোনো-একটা জায়গায় জোড় আছে এবং সেই জোড়ের মুখে তাহাকে দইখানা করা যায়, সহসা সে সংবাদ পাইয়া তিনি ব্যাকুল হইয়া পড়িলেন। বংশের সম্মানহানি এবং আত্মীয়দের মনোবেদনায় তারাপদকে যখন কিছুমার বিচলিত করিতে পারিল না, তখন কেমন করিয়া বিষয় বিভাগ হইতে পারে সেই অসাধ্য চিন্তায় ভবানীকে প্রবত্ত হইতে হইল। তারাপদ তাঁহার চিন্তা দেখিয়া অত্যন্ত বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “খড়ামহাশয়, কাণ্ড কী। আপনি এত ভাবিতেছেন কেন। বিষয় ভাগ তো হইয়াই আছে । ঠাকুরদাদা বাঁচিয়া থাকিতেই তো ভাগ করিয়া দিয়া গেছেন।” ভবানী হতবধি হইয়া কহিলেন, “সত্য নাকি! আমি তো তাহার কিছুই জানি না ।” তারাপদ কহিলেন, “বিলক্ষণ! জানেন না তো কী ! দেশসন্ধে লোক জানে, পাছে আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিবাদ ঘটে এইজন্য আলন্দি তালকে আপনাদের অংশে লিখিয়া দিয়া ঠাকুরদাদা প্রথম হইতে আপনাদিগকে পথক করিয়া দিয়াছেন— সেই ভাবেই তো এ-পয'ত চলিয়া আসিতেছে।” ভবানীচরণ ভাবিলেন, সকলই সম্পভব। জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই বাড়ি ?” তারাপদ কহিলেন, “ইচ্ছা করেন তো বাড়ি আপনারাই রাখতে পারেন। সদর মহকুমায় যে কুঠি আছে সেইটে পাইলেই আমাদের কোনোরকম করিয়া চলিয়া যাইবে।” তারাপদ এত অনায়াসে পৈতৃক বাড়ি ছাড়িতে প্রস্তুত হইলেন দেখিয়া, তাঁহার ঔদাযে তিনি বিস্মিত হইয়া গেলেন। তাঁহাদের সদর মহকুমার বাড়ি তিনি কোনোদিন দেখেন নাই এবং তাহার প্রতি তাঁহার কিছুমাত্র মমতা ছিল না। ভবানী যখন তাঁহার মাতা ব্ৰজসাদরীকে সকল বভাগত জানাইলেন তিনি কপালে করাঘাত করিয়া বলিলেন, “ওমা, সে কী কথা । আলদি তালকে তো আমার খোরপোষের জন্য আমি সাধনস্বরপে পাইয়াছিলাম—তাহার আয়ও তো তেমন বেশি নয়।