পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ げ切 গল্পগুচ্ছ করিবার জন্য সমস্ত গ্রহনক্ষত্রের আকাশব্যাপী আনকেল্যের ফলে যে শিশ ধরাধামে অবতীণ হইয়াছে তাহার প্রতি তো একটা কতব্য আছে। আজ পর্যন্ত ধারাবাহিক কাল ধরিয়া এই পরিবারে পত্রসন্তানমাত্রই আজন্মকাল যে সমাদর লাভ করিয়াছে ভবানীচরণের জ্যেষ্ঠ পত্রই প্রথম তাহা হইতে বঞ্চিত হইল, এ বেদনা তিনি ভুলিতে পারলেন না। এ বংশের চিরপ্রাপ্য আমি যাহা পাইয়াছি আমার পত্রকে তাহা দিতে পারলাম না ইহা সমরণ করিয়া তাঁহার মনে হইতে লাগিল, আমিই ইহাকে ঠকাইলাম। তাই কালীপদর জন্য অথব্যয় যাহা করিতে পারিলেন না, প্রচুর আদর দিয়া তাহা পরিণ করিবার চেষ্টা করিলেন। ভবানীর সত্রী রাসমণি ছিলেন অন্য ধরনের মানুষ। তিনি শানিয়াড়ির চৌধুরীদের বংশগৌরব সম্বন্ধে কোনোদিন উদবেগ অনুভব করেন নাই। ভবানী তাহ জানিতেন এবং ইহা লইয়া মনে মনে তিনি হাসিতেন ; ভাবিতেন, যেরপে সামান্য দরিদ্র বৈষ্ণববংশে তাঁহার স্ত্রীর জন্ম তাহাতে তাঁহার এ ব্যটি ক্ষমা করাই উচিত— চৌধুরীদের মানমযাদা সম্বন্ধে ঠিকমতো ধারণা করাই তাঁহার পক্ষে অসম্পভব । রাসমণি নিজেই তাহা স্বীকার করিতেন ; বলিতেন, “আমি গরিবের মেয়ে, মানসম্প্রমের ধার ধারি না; কালীপদ আমার বাঁচিয়া থাক, সেই আমার সকলের চেয়ে বড়ো ঐশবষ্য।” উইল আবার পাওয়া যাইবে এবং কালীপদব কল্যাণে এ বংশে লতে সম্পদের শান্য নদীপথে আবার বান ডাকিবে, এ-সব কথায় তিনি একেবারে কানই দিতেন না। এমন মানুষই ছিল না যাহার সঙ্গে তাঁহার স্বামী হারানো উইল লইয়া আলোচনা না করিতেন। কেবল, এই সকলের চেয়ে বড়ো মনের কথাটি তাঁহার শত্রীর সঙ্গে হইত না। দই-একবার তাঁহার সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কোনো রস পাইলেন না। অতীত মহিমা এবং ভাবী মহিমা, এই দুইয়ের প্রতিই তাঁহার সন্ত্রী মনোযোগমাত্র করিতেন না ; উপস্থিত প্রয়োজনই তাঁহার সমস্ত চিত্তকে আকষণ করিয়া রাখিয়াছিল। সে প্রয়োজনও বড়ো অলপ ছিল না। অনেক চেষ্টায় সংসার চালাইতে হইত। কেননা, লক্ষী চলিয়া গেলেও তাঁহার বোঝা কিছু কিছু পশ্চাতে ফেলিয়া যান, তখন উপায় থাকে না বটে কিন্তু অপায় থাকিয়া যায়। এ পরিবারে আশ্রয় প্রায় ভাঙিয়া গিয়াছে কিন্তু আশ্রিত দল এখনও তাঁহাদিগকে ছয়টি দিতে চায না । ভবানীচরণও তেমন লোক নহেন যে, অভাবের ভয়ে কাহাকেও বিদায় করিষা দিবেন। এই ভারগ্রস্ত ভাঙা সংসারটিকে চালাইবার ভার রাসমণির উপরে। কাহারও কাছে তিনি বিশেষ কিছু সাহায্যও পান না। কারণ, এ সংসারের সচ্ছল অবস্থার দিনে আশ্রিতেরা সকলেই আরামে ও আলস্যেই দিন কাটাইয়াছে। চৌধুরীবংশের মহা বক্ষের তলে ইহাদের সুখশয্যার উপরে ছায়া আপনিই আসিয়া বিস্তীণ হইয়াছে এবং ইহাদের মখের কাছে পাকা ফল আপনিই আসিয়া পড়িয়াছে-- সেজন্য ইহাদের কাহাকেও কিছুমাত্র চেষ্টা করিতে হয় নাই। আজ ইহাদিগকে কোনোপ্রকার কাজ করিতে বলিলে, ইহারা ভারি অপমান বোধ করে— এবং রান্নাঘরের ধোঁয়া লাগিলেষ্ট