পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাসমণির ছেলে &వ6 পথিবীতে মল্যে না দিয়া যে কিছুই পাওয়া যায় না এবং সে মুল্য যে দুঃখের মল্য, মাতার অন্তরঙ্গ হইয়া সে কথা কালীপদ প্রতিদিন যতই বুঝিতে পারিল ততই দেখিতে দেখিতে সে যেন ভিতরের দিক হইতে বড়ো হইয়া উঠিতে লাগিল। সকল কাজেই এখন সে তার মাতার দক্ষিণপাশেব আসিয়া দড়িাইল । সংসারের ভার বহিতে হইবে, সংসারের ভার বাড়াইতে হইবে না, এ কথা বিনা উপদেশবাক্যেই তাহার রক্তের সঙ্গেই মিশিয়া গেল । জীবনের দায়িত্ব গ্রহণ করিবার জন্য তাহাকে প্রস্তুত হইতে হইবে, এই কথা সমরণ রাখিয়া কালীপদ প্রাণপণে পড়িতে লাগিল। ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীণ হইয়া যখন সে ছাত্রবৃত্তি পাইল তখন ভবানীচরণ মনে করিলেন, আর বেশি পড়াশনার দরকার নাই, এখন কালীপদ তাঁহাদের বিষয়য়কম দেখায় প্রবত্ত হউক । কালীপদ মাকে আসিয়া কহিল, “কলিকাতায় গিয়া পড়াশুনা না করিতে পারিলে আমি তো মানুষ হইতে পারিব না।” মা বলিলেন, “সে তো ঠিক কথা, বাবা। কলিকাতায় তো যাইতেই হইবে।” কালীপদ কহিল, “আমার জন্য কোনো খরচ করিতে হইবে না। এই বত্তি হইতেই চালাইয়া দিব— এবং কিছু কাজকমেরও জোগাড় করিয়া লইব ।” இ ভবানীচরণকে রাজি করাইতে অনেক কষ্ট পাইতে হইল। দেখিবার মতো বিষয়সম্পত্তি যে কিছুই নাই, সে কথা বলিলে ভবানীচরণ অত্যন্ত দুঃখবোধ করেন, তাই রাসমণিকে সে যুক্তিটা চাপিয়া যাইতে হইল। তিনি বলিলেন, “কালীপদকে তো মানুষ হইতে হইবে।” কিন্তু, পরিষোনুক্ৰমে কোনোদিন শানিয়াড়ির বাহিরে না গিয়াই তো চৌধুরীরা এতকাল মানুষ হইয়াছে। বিদেশকে তাঁহারা যমপরীর মতো ভয় করেন । কালীপদর মতো বালককে একলা কলিকাতায় পাঠাইবার প্রস্তাবমাত্র কী করিয়া কাহারও মাথায় আসিতে পাবে, তিনি ভাবিয়া পাইলেন না। অবশেষে গ্রামের সব প্রধান বুদ্ধিমান বান্তি বগলাচরণ পর্যন্ত রাসমণির মতে মত দিল। সে বলিল, “কালীপদ একদিন উকিল হইয়া সেই উইল-চুরি ফাঁকির শোধ দিবে, নিশ্চয়ই এ তাহার ভাগ্যের লিখন— অতএব কলিকাতায় যাওয়া হইতে কেহই তাহাকে নিবারণ করিতে পারবে না।” এ কথা শুনিয়া ভবানীচরণ অনেকটা সাত্বনা পাইলেন। গামছায় বাঁধা পরানো সমস্ত নথি বাহির করিয়া উইল-চুরি লইয়া কালীপদর সঙ্গে বারবার আলোচনা করিতে লাগিলেন। সম্প্রতি মাতার মন্ত্রীর কাজটা কালীপদ বেশ বিচক্ষণতার সঙ্গেই চালাইতেছিল, কিন্তু পিতার মন্ত্রণাসভায় সে জোর পাইল না। কেননা, তাহাদের পরিবারের এই প্রাচীন অন্যায়টা সম্বন্ধে তাহার মনে যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল না। তব সে পিতার কথায় সায় দিয়া গেল। সীতাকে উদ্ধার করিবার জন্য বীরশ্রেষ্ঠ রাম যেমন লঙ্কায় যাত্রা করিয়াছিলেন, কালীপদর কলিকাতায় যাত্রাকেও ভবানীচরণ তেমনি খবে বড়ো করিয়া দেখিলেন—সে কেবল সামান্য পাস করার ব্যাপার নয়— ঘরের লক্ষয়ীকে ঘরে ফিরাইয়া আনিবার আয়োজন। কলিকাতায় যাইবার আগের দিন রাসমণি কালীপদর গলায় একটি রক্ষাকবচ কলাইয়া দিলেন ; এবং তাহার হাতে একটি পঞ্চাশ টাকার নোট দিয়া বলিয়া দিলেন, "এই নোটটি রাখিয়ো, আপদে বিপদে প্রয়োজনের সময় কাজে ,াগবে।” সংসার-খরচ