পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পণরক্ষা もa> গোপালের বাপ আসিয়া অনেক বলিয়া-কহিয়া রসিককে বাড়িতে লইয়া আসিল । রসিক সেখানে প্রবেশ করিয়াই মহন্তকালের জন্য দেখিতে পাইল, সৌরভ সেই তাহার চিত্রিত কাঁথায় মোড়া কী-একটা জিনিস অতি যত্নে রোয়াকের দেয়ালে ঠেসন দিয়া রাখিতেছে। প্রাঙ্গণে লোকসমাগমের শব্দ পাইবামাত্রই সে ছটিয়া ঘরের মধ্যে । অন্তহিত হইল। রসিক কাছে আসিয়াই বুঝিতে পারিল, এই কথিায় মোড়া পদার্থটি একটি নতন বাইসিকল । তৎক্ষণাৎ তাহার অর্থ বুঝিতে আর বিলম্ব হইল না। একটা বক-ফাটা কান্না বক্ষ ঠেলিয়া তাহার কঠের কাছে পাকাইয়া পাকাইয়া উঠিতে লাগিল এবং চোখের জলের সমস্ত রাস্তা যেন ঠাসিয়া বন্ধ করিয়া ধরিল। রসিক চলিয়া গেলে বংশী দিনরাত্রি অবিশ্রাম খাটিয়া সৌরভীর পণ এবং এই বাইসিকল কিনিবার টাকা সঞ্চয় করিয়াছিল। তাহার এক মহতে আর-কোনো চিন্তা ছিল না। ক্লান্ত ঘোড়া যেমন প্রাণপণে ছটিয়া গম্য পথানে পৌছিয়াই পড়িয়া মরিয়া যায়, তেমনি যেদিন পণের টাকা পণ করিয়া বংশী বাইসিক্যুলটি ভি. পি. ডাকে পাইল সেইদিনই আর তাহার হাত চলিল না, তাহার তাঁত বন্ধ হইয়া গেল ; গোপালের পিতাকে ডাকিয়া তাহার হাতে ধরিয়া সে বলিল, “আর-একটি বছর রসিকের জন্য অপেক্ষা করিয়ো– এই তোমার হাতে পণের টাকা দিয়া গেলাম। আর যেদিন রসিক আসিবে তাহ কে এই চাকার গাড়িটি দিয়া বলিয়ো, দাদার কাছে চাহিয়াছিল, তখন হতভাগ্য দাদা দিতে পারে নাই, কিন্তু তাই বলিযা মনে যেন সে রাগ না রাখে।” দাদার টাকার উপহার গ্রহণ করিবে না, একদিন এই শপথ করিয়া রসিক চলিয়া গিয়াছিল। বিধাতা তাহার সেই কঠোর শপথ শুনিয়াছিলেন। আজ যখন রসিক ফিরিয়া আসিল তখন দেখিল, দাদাব উপহার তাহার জন্য এতদিন পথ চাহিয়া বসিয়া আছে, কিন্তু তাহা গ্রহণ করিবার বার একেবারে রন্ধ । তাহার দাদা যে-তীতে আপনার জীবনটি বুনিয়া আপনার ভাইকে দান করিয়াছে, রসিকের ভারি ইচ্ছা করিল, সব ছাড়িয়া সেই তাঁতের কাছেই আপনার জীবন উৎসগ করে। কিন্তু হায়, কলিকাতা শহরে টাকার হাড়কাঠে চিরকালের মতো সে আপনার জীবন বলি দিয়া আসিয়াছে। পৌষ ১৩১৮ 8’S,