পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

も○しf গল্পগুচ্ছ অদ্ভুত বটে। এ বংশে কতকাল ধরিয়া কত বড়োবাব জমিয়াছে এবং কোনোদিন নীলকণ্ঠেরও অভাব নাই। নীলকণ্ঠেরা বিষয়ব্যবস্থার সমস্ত দায় নিজেরা লইয়াছে আর বড়োবাবরা সম্পণে নিশ্চেষ্টভাবে বংশগৌরব রক্ষা করিয়াছে। এমন বিপরীত ব্যাপার তো কোনোদিন ঘটে নাই! আজ এই পরিবারের বড়োবাবরে পদের অবনতি ঘটাতে বড়োবউয়ের সমানে আঘাত লাগিল। ইহাতে এতদিন পরে আজ স্বামীর প্রতি কিরণের যথাথ আশ্রমধার কারণ ঘটিল। এতদিন পরে তাহার বসন্তকালের লটকানে রঙের শাড়ি এবং খোঁপার বেলফলের মালা লজ্জায় লনি হইয়া গেল। কিরণের বয়স হইয়াছে অথচ সন্তান হয় নাই। এই নীলকন্ঠই একদিন কতার মত করাইয়া পাত্রী দেখিয়া বনোয়ারির আর-একটি বিবাহ প্রায় পাকাপাকি স্থির করিয়াছিল। বনোয়ারি হালদারবংশের বড়ো ছেলে, সকল কথার আগে এ কথা তো মনে রাখিতে হইবে। সে অপত্রক থাকিবে, ইহা তো হইতেই পারে না। এই ব্যাপারে কিরণের ব্যক দরদের করিয়া কাঁপিয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু, ইহা সে মনে মনে না স্বীকার করিয়া থাকিতে পারে নাই যে, কথাটা সংগত। তখনো সে নীলকণ্ঠের উপরে কিছমাত্র রাগ করে নাই, সে নিজের ভাগ্যকেই দোষ দিয়াছে। তাহার স্বামী যদি নীলকন্ঠকে রাগিয়া মারিতে না যাইত এবং বিবাহসম্প্রবন্ধ ভাঙিয়া দিয়া পিতামাতার সঙ্গে রাগরাগি না করিত তবে কিরণ সেটাকে অন্যায় মনে করিত না । এমন-কি, বনোয়ারি ষে তাহার বংশের কথা ভাবিল না, ইহাতে অতি গোপনে কিরণের মনে বনোয়ারির পৌরুষের প্রতি একটা অশ্রদ্ধাই হইয়াছিল। বড়ো ঘরের দাবি কি সামান্য দাবি। তাহার যে নিষ্ঠর হইবার অধিকার আছে। তাহার কাছে কোনো তরণী সত্রীর কিবা কোনো দুঃখী কৈবতের সুখদঃখের কতটুকুই বা মলা : সাধারণত যাহা ঘটিয়া থাকে এক-একবার তাহা না ঘটিলে কেহই তাহা ক্ষমা করিতে পারে না, এ কথা বনোয়ারি কিছুতেই বঝিতে পারিল না। সম্পর্ণেরপে এ বাড়ির বড়োবাব হওয়াই তাহার উচিত ছিল; অন্য কোনো প্রকারের উচিত-অন-চিত চিন্তা করিয়া এখানকার ধারাবাহিকতা নষ্ট করা যে তাহার অকতব্য, তাহা সে ছাড়া সকলেরই কাছে অত্যন্ত সপেস্ট। এ লইয়া কিরণ তাহার দেবরের কাছে কত দুঃখই করিয়াছে। বংশী বধিমান ; তাহার খাওয়া হজম হয় না এবং একট হাওয়া লাগিলেই সে হাঁচিয়া কাশিয়া অস্থির হইয়া উঠে, কিন্তু সে স্থির ধীর বিচক্ষণ। সে তাহার আইনের বইয়ের যে অধ্যায়টি পড়িতেছিল সেইটেকে টেবিলের উপর খোলা অবস্থায় উপড়ে করিয়া রাখিয়া কিরণকে বলিল, “এ পাগলামি ছাড়া আর-কিছুই নহে।" কিরণ অত্যন্ত উদবেগের সহিত মাথা নাড়িয়া কহিল, “জান তো ঠাকুরপো, তোমার দাদা যখন ভালো আছেন তখন বেশ আছেন, কিন্তু একবার যদি খ্যাপেন তবে তাঁহাকে কেহ সামলাইতে পারে না ! আমি কী করি বলো তো।” পরিবারের সকল প্রকৃতিস্থ লোকের সঙ্গেই যখন কিরণের মতের সম্পর্ণে মিল হইল তখন সেইটেই বনোয়ারির বকে সকলের চেয়ে বাজিল। এই একটুখানি সীলোক, অনতিফট চাঁপাফলটির মতো পেলব, ইহার হদয়টিকে আপন বেদনার কাছে টানিয়া আনিতে পারষের সমস্ত শক্তি পরাস্ত হইল। আজকের দিনে কিরণ