পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাইফোঁটা も切s> বিদায়কালে অন বাক্স খলিয়া কোম্পানির কাগজ ও কয়েক কেতা নোট বঝোইয়া দিল। তার উইলে দেখিলাম লেখা আছে, অপত্রক ও নাবালক অবস্থায় সবোধের মৃত্যু হইলে আমিই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। আমি বলিলাম, “আমার স্বাথের সঙ্গে তোমার সম্পত্তি কেন এমন করিয়া জড়াইলে ।” অন কহিল, “আমি যে জানি, আমার ছেলের সবাথে তোমার বাথ কোনোদিন বাধিবে না।” আমি কহিলাম, “কোনো মানষেকেই এতটা বিশ্বাস করা কাজের দস্তুর নয়।” অন কহিল, “আমি তোমাকে জানি, ধমকে জানি, কাজের দস্তুর বঝিবার আমার শক্তি নাই।” বাক্সের মধ্যে গহনা ছিল, সেগুলি দেখাইয়া সে বলিল, “সবোধ যদি বাঁচে ও বিবাহ করে, তবে বউমাকে এই গহনা ও আমার আশীবাদ দিয়ো। আর, এই পান্নার ক-ঠীটি বউদিদিকে দিয়া বলিয়ো, আমার মাথার দিব্য, তিনি যেন গ্রহণ করেন।” এই বলিয়া অন যখন ভূমিষ্ঠ হইয়া আমাকে প্রণাম করিল তার দুই চোখ জলে ভরিয়া উঠিল। উঠিয়া দাঁড়াইয়া তাড়াতাড়ি সে মুখ ফিরাইয়া চলিয়া গেল। এই আমি তার শেষ প্রণাম পাইয়াছি। ইহার দুই দিন পরেই সন্ধ্যার সময় হঠাৎ নিশবাস বন্ধ হইয়া তার মৃত্যু হইল— আমাকে খবর দিবার সময় পাইল না। যেমনি নামিলাম দেখি, প্রসন্ন অপেক্ষা করিয়া আছে। জিজ্ঞাসা করিল, “দাদা খবর ভালো তো ?” আমি বলিলাম, “এ টাকায় কেহ হাত দিতে পারবে না।” প্রসন্ন কহিল, “কিন্তু—“ আমি বলিলাম, “সে জানি না-- যা হয় তা হোক, এ টাকা আমার ব্যবসায়ে লাগিবে না।” প্রসন্ন বলিল, “তবে তোমার অন্ত্যেষ্টিসংকারে লাগিবে।" অনরে মৃত্যুর পর সবোধ আমার বাড়িতে আসিষা আমার ছেলে নিত্যধনকে সঙ্গী পাইল । যাবা গল্পের বই পড়ে মনে করে, মানুষেব মনের বড়ো বড়ো পরিবতন ধীরে ধীরে ঘটে। ঠিক উন্টো । টিকার আগন ধরিতে সময় লাগে কিন্তু বড়ো বড়ো আগন হহেন করিয়া ধরে। আমি এ কথা যদি বলি যে, অতি অলপ সময়ের মধ্যে সবোধের উপর আমার মনের একটা বিশেষ দেখিতে দেখিতে বাড়িয়া উঠিল, তবে সবাই তার বিস্তারিত কৈফিয়ত চাহিবে। সবোধ অনাথ সে বড়ো ক্ষীণপ্রাণ, সে দেখিতেও সন্দের, সকলের উপরে সবোধের মা স্বয়ং অনা-কিন্তু তার কথাবাতা, চলাফেরা খেলাধুলা, সমস্তই যেন আমাকে দিনরাত খোঁচা দিতে লাগিল। আসল, সময়টা বড়ো খারাপ পড়িয়াছিল। সবোধের টাকা কিছুতেই লইব না পণ ছিল, অথচ ও টাকাটা না লইলে নয় এমনি অবস্থা। শেষকালে একদিন মহা বিপদে পড়িয়া কিছু লইলাম। ইহাতে আমার মনের কল এমনি বিগড়াইয়া গেল