পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ó0 গল্পগুচ্ছ এখানকার রাজাকে দেখাইয়া দিতে পার ?” “পারি। কেন বলো দেখি।" “আমার একটা ছোরা আছে, তাহার বকের মধ্যে বসাইতে চাহি।" প্রথমে দালিয়া কিছ আশ্চর্য হইয়া গেল। তাহার পর জলিখার হিংসাপ্রখর মখের দিকে চাহিয়া তাহার সমস্ত মুখ হাসিতে ভরিয়া গেল; যেন এতবড়ো মজার কথা সে ইতিপবে কখনো শোনে নাই। যদি পরিহাস বল তো এই বটে, রাজপত্রীর উপযুক্ত। কোনো কথা নাই, বাতা নাই, প্রথম আলাপেই একখানি ছোরার আধখানা একটা জীবন্ত রাজার বক্ষের মধ্যে চালনা করিয়া দিলে, এইরুপ অত্যন্ত অন্তরঙ্গ ব্যবহারে রাজাটা হঠাৎ কিরুপ অবাক হইয়া যায়, সেই চিত্র ক্ৰমাগত তাহার মনে উদিত হইয়া তাহার নিঃশব্দ কৌতুকহাসি থাকিয়া থাকিয়া উচ্চহাসো পরিণত হইতে লাগিল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ তাহার পরদিনই রহমত শেখ জলিখাকে গোপনে পত্র লিখিল যে, আরাকানের নতন রাজা ধীবরের কুটিরে দুই ভগ্নীর সন্ধান পাইযাছেন এবং গোপনে আমিনাকে দেখিয়া অত্যন্ত মগধ হইয়াছেন। তাহাকে বিবাহাথে অবিলম্বর প্রাসাদে আনিবার আয়োজন করিতেছেন। প্রতিহিংসার এমন সন্দের অবসর আর পাওয়া যাইবে না।’ তখন জলিখা দঢ়ভাবে আমিনার হাত ধরিয়া কহিল, "ঈশ্বরের ইচ্ছা স্পষ্টই দেখা যাইতেছে। আমিনা, এইবার তোর জীবনের কতবা পালন করিবার সময় আসিয়াছে, এখন আর খেলা ভালো দেখায় না।" দালিয়া উপস্থিত ছিল, আমিনা তাহাব মুখের দিকে চাহিল ; দেখিল, সে সকৌতুকে হাসিতেছে। আমিনা তাহার হাসি দেখিয়া মমাহত হইয়া কহিল, “জাল মলিয়া, আমি রাজবধ হইতে যাইতেছি।” দালিয়া বলিল, “সে তো বেশিক্ষণের জন্য নয় ।” আমিনা পীড়িত বিসিমত চিত্তে মনে মনে ভাবিল, “বাসতবিকই এ বনের মাগ এর সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করা আমারই পাগলামি ।” আমিনা দালিয়াকে আর-একটা সচেতন করিয়া তুলিলাব নো কঠিল “রাজাকে মারিয়া আর কি আমি ফিরিব।” দালিয়া কথাটা সংগত জ্ঞান করিয়া কহিল, "ফেরা কঠিন বাট ।” অমিনার সমস্ত অন্তরাত্মা একেবারে লান হইবা গেল । জলিখার দিকে ফিরিয়া নিশবাস ফেলিয়া কহিল, "দিদি, আমি প্রস্তুত আছি।” এবং দালিয়ার দিকে ফিরিয়া বিধ অন্তরে পরিহাসের ভান কলিয়া কহিল, "রানী হইয়াই আমি প্রথমে তোমাকে রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে যোগ দেওয়া অপরাধে শাসিত দিব । তার পরে আর যাহা করিতে হয় করিব।” শুনিয়া দালিয়া বিশেষ কৌতুক বোধ করিল, যেন প্রস্তাবটা কায পরিণত হইলে তাহার মধ্যে অনেকটা আমোদের বিষয় আছে।