পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ aసివ তপস্বিনী বৈশাখ প্রায় শেষ হইয়া আসিল। প্রথম রাত্রে গমট গেছে, বাঁশগাছের পাতাটা পৰ্যন্ত নড়ে না, আকাশের তারাগুলো যেন মাথা-ধরার বেদনার মতো দব দব করিতেছে। রাত্রি তিনটের সময় ঝির ঝির করিয়া একটুখানি বাতাস উঠিল। ষোড়শী শান্য মেঝের উপর খোলা জানালার নীচে শ্যইয়া আছে, একটা কাপড়ে-মোড়া টিনের বাক্স তার মাথার বালিশ। বেশ বোঝা যায়, খুব উৎসাহের সঙ্গে সে কৃচ্ছসাধন করিতেছে। প্রতিদিন ভোর চারটের সময় উঠিয়া স্নান সারিয়া ষোড়শী ঠাকুরঘরে গিয়া বসে। আহ্নিক করিতে বেলা হইয়া যায়। তার পরে বিদ্যারত্নমশায় আসেন; সেই ঘরে বসিয়াই তাঁর কাছে সে গীতা পড়ে। সংস্কৃত সে কিছু কিছু শিখিয়াছে। শঙ্করের বেদান্তভাষা এবং পাতঞ্জলদশন মল গ্রন্থ হইতে পড়িবে, এই তার পণ। বয়স তার তেইশ হইবে । ঘরকন্নার কাজ হইতে ষোড়শী অনেকটা তফাত থাকে— সেটা যে কেন সম্ভব হইল তার কারণটা লইয়াই এই গলপ । নামের সঙ্গে মাখনবাবরে স্বভাবের কোনো সাদশা ছিল না। তাঁর মন গলানো বড়ো শক্ত ছিল । তিনি ঠিক করিয়াছিলেন, যতদিন তাঁর ছেলে বরদা অন্তত বি. এ. পাস না করে ততদিন তাঁর বউমার কাছ হইতে সে দরে থাকিবে। অথচ পড়াশনাটা বরদার ঠিক ধাতে মেলে না, সে মানুষটি শৌখিন। জীবননিকুঞ্জের মধ্য-সঞ্চয়ের সম্বন্ধে মৌমাছির সঙ্গে তার মেজাজটা মেলে, কিন্তু মৌচাকের পালায় ষে পরিশ্রমের দরকাব সেটা তার একেবারেই সয় না। বড়ো আশা করিয়াছিল, বিবাহের পর হইতে গোঁফে তা দিয়া সে বেশ একট আরামে থাকিবে, এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটগুলো সদরেই ফকিবার সময় আসিবে। কিন্তু, কপালক্রমে বিবাহের পরে তার মঙ্গলসাধনের ইচ্ছা তাব বাপের মনে আরও বেশি প্রবল হইয়া উঠিল । ইস্কুলের পন্ডিতমশায় বরদার নাম দিয়াছিলেন, গোতম মনি। বলা বাহুল্য, সেটা বরদাব ব্ৰহাতেজ দেখিয়া নয়। কোনো প্রশ্নের সে জবাব দিত না বলিয়াই তাকে তিনি মুনি বলিতেন এবং যখন জবাব দিত তখন তার মধ্যে এমন কিছ গব্য পদাপ পাওয়া যাইত যাতে পণ্ডিতমশায়ের মতে তার গোতম উপাধি সাথ’ক ठुङेशाग्रीकृठन । মাখন হেডমাস্টারের কাছে সন্ধান লইয়া জানিলেন, ইস্কুল এবং ঘরের শিক্ষক এইরুপ বড়ো বড়ো দুই এঞ্জিন আগে পিছে জড়িয়া দিলে তবে বরদার সঙ্গতি নামজাদা মাস্টার বালি দশটা সাড়ে-দশটা পষতি বরদার সঙ্গে লাগিয়া রহিলেন। সত্যযুগে সিন্ধিলাভের জন্য বড়ো বড়ো তপস্বী যে তপস্যা করিয়াছে সে ছিল একলার তপস্যা, কিন্তু মাস্টারের সঙ্গে মিলিয়া বরদার এই-ষে যৌথ তপস্যা এ তার চেয়ে অনেক বেশি দুঃসহ। সে কালের তপস্যার প্রধান উত্তাপ ছিল অনিকে লইয়া : এখনকার এই পরীক্ষা-তাপসের তাপের প্রধান কারণ অনিশমীরা: তারা বরদাকে বড়ো জনালাইল। তাই এত দুঃখের পর যখন সে পরীক্ষায় ফেল করিল তখন তার