পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

qミミ গল্পগুচ্ছ বলিতেন, দাদা কেন যে এত মাস্টার-পণ্ডিতের পিছনে খরচ করেন তা তো বুঝি নে। লিখে পড়ে দিতে পারি, বরদা কখনোই পাস করতে পারবে না। পারিবে না এ বিশ্বাস ষোড়শীরও ছিল, কিন্তু সে একমনে কামনা করিত যেন কোনো গতিকে পাস করিয়া বরদা অন্তত পিসির মাখের ঝাজটা মারিয়া দেয়। বরদা প্রথমবার ফেল.করিবার পর মাখন যখন দ্বিতীয়বার মাস্টারের বাহ বাধিবার চেষ্টায় লাগিলেন–পিসি বলিলেন, ধন্য বলি দাদাকে ! মানুষ ঠেকেও তো শেখে। তখন ষোড়শী দিনরাত কেবল এই অসম্ভব-ভাবনা ভাবিতে লাগিল, বরদা এবার যেন হঠাৎ নিজের আশ্চর্য গোপন শক্তি প্রকাশ করিয়া অবিশ্ববাসী জগৎটাকে স্তম্ভিত করিয়া দেয় ; সে যেন প্রথম শ্রেণীতে সব-প্রথমের চেয়েও আরও আরও আরও অনেক বড়ো হইয়া পাস করে— এত বড়ো যে, স্বয়ং লাটসাহেব সওয়ার পাঠাইয়া দেখা করিবার জন্য তাহাকে তলব করেন । এমন সময়ে কবিরাজের অব্যৰ্থ বড়িটা ঠিক পরীক্ষাদিনের মাথার উপর যন্ধের বোমার মতো আসিয়া পড়িল। সেটাও মন্দের ভালো হইত যদি লোকে সন্দেহ না করিত। পিসি বলিলেন, ছেলের এ দিকে বধি নেই, ও দিকে আছে। লাটসাহেবের তলব পড়িল না। ষোড়শী মাথা হে’ট করিয়া লোকের হাসাহাসি সহ্য করিল। সময়োচিত জোলাপের প্রহসনটায় তার মনেও যে সন্দেহ হয় নাই এমন কথা বলিতে পারি না । এমন সময় বরদা ফেরার হইল। ষোড়শী বড়ো আশা করিয়াছিল, অন্তত এই ঘটনাকেও বাড়ির লোকে দীঘটনা জ্ঞান করিয়া অনন্তাপ পরিতাপ করিবে। কিন্তু, তাহাদের সংসার বরদার চলিয়া যাওয়াটাকেও পরা দাম দিল না। সবাই বলিল, এই দেখো-না, এল বলে! ষোড়শী মনে মনে বলিতে লাগিল, কথখনো না । ঠাকুর, লোকের কথা মিথ্যা হোক! বাড়ির লোককে যেন হায়-হায় করতে হয় ! এইবার বিধাতা ষোড়শীকে বর দিলেন ; তার কামনা সফল হইল। এক মাস গেল, বরদার দেখা নাই; কিন্তু তব কারও মুখে কোনো উদবেগের চিহ্ন দেখা যায় না। দই মাস গেল, তখন মাখনের মনটা একট চঞ্চল হইয়াছে, কিন্তু বাহিরে সেটা কিছুই প্রকাশ করিলেন না। বউমার সঙ্গে চোখাচৌখি হইলে তাঁর মুখে যদিবা বিবাদের মেঘ-সঞ্চার দেখা যায়, পিসির মখে একেবারে জ্যৈষ্ঠমাসের অনাবটির আকাশ বলিলেই হয়। কাজেই সদর দরজার কাছে একটা মানুষ দেখিলেই ষোড়শী চমকিয়া ওঠে : আশঙ্কা, পাছে তার স্বামী ফিরিয়া আসে : এমনি করিয়া যখন তৃতীয় মাস কাটিল, তখন ছেলেটা বাড়ির সকলকে মিথ্যা উদবিগ্ন করিতেছে বলিয়া পিসি নালিশ শর করিলেন। এও ভালো, অবজ্ঞার চেয়ে রাগ ভালো। পরিবারের মধ্যে ক্ৰমে ভয় ও দুঃখ ঘনাইয়া আসিতে লাগিল। খোঁজ করিতে করিতে ক্ৰমে এক বছর যখন কাটিল তখন, মাখন যে বরদার প্রতি অনাবশ্যক কঠোরাচরণ করিয়াছেন সে কথা পিসিও বলিতে শর করিলেন। দই বছর যখন গেল তখন পাড়া-প্রতিবেশীরাও বলিতে লাগিল, বরদার পড়াশনায় মন ছিল না বটে কিন্তু মানষেটি বড়ো ভালো ছিল। বরদার অদশনকাল যতই দীঘ হইল ততই, তার স্বভাব যে অত্যন্ত নিমাল ছিল, এমন-কি সে যে তামাকটা পৰ্যন্ত খাইত না, এই অন্ধ বিশ্ববাস পাড়ার লোকের মনে বন্ধমলে হইতে লাগিল। স্কুলের পণ্ডিতমশায় স্বয়ং বলিলেন, এইজনাই তো তিনি বরদাকে গোতম মনি নাম দিয়াছিলেন, তখন হইতেই উহার বৃদ্ধি বৈরাগ্যে একেবারে নিরেট হইয়া ছিল। পিসি প্রত্যহই অন্তত একবার করিয়া তাঁর দাদার জেদী মেজাজের পরে দোষারোপ