পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তপস্বিনী aミ○ করিয়া বলিতে লাগিলেন, বরদার এত লেখাপড়ার দরকারই বা কী ছিল। টাকার তো অভাব নাই। যাই বল বাপ, তার শরীরে কিন্তু দোষ ছিল না। আহা, সোনার টুকরো ছেলে " তার স্বামী যে পবিত্রতার আদশ ছিল এবং সংসারসন্ধি সকলেই তার প্রতি অন্যায় করিয়াছে, সকল দুঃখের মধ্যে এই সান্দ্রনায়, এই গৌরবে ষোড়শীর মন ভরিয়া উঠিতে লাগিল । এ দিকে বাপের ব্যথিত হন্দরের সমস্ত স্নেহ দ্বিগণে করিয়া ষোড়শীর উপর আসিয়া পড়িল। বউমা যাতে সুখে থাকে, মাখনের এই একমাত্র ভাবনা। তাঁর বড়ো ইচ্ছা, ষোড়শী তাকে এমন-কিছু ফরমাশ করে যেটা দলভ– অনেকটা কষ্ট করিয়া, লোকসান করিয়া, তিনি তাকে একটা খুশি করিতে পারিলে যেন বাঁচেন—তিনি এমন করিয়া ত্যাগ স্বীকার করিতে চান যেটা তাঁর পক্ষে প্রায়শ্চিত্তের মতো হইতে পারে। ষোড়শী পনেরো বছরে পড়িল । ঘরের মধ্যে একলা বসিয়া যখন-তখন তার চোখ জলে ভরিয়া আসে। চিরপরিচিত সংসারটা তাকে চারি দিকে যেন অটিয়া ধরে, তার প্রাণ হাঁপাইয়া ওঠে । তার ঘরের প্রত্যেক জিনিসটা, তার বারান্দার প্রত্যেক রেলিঙটা, আলিসার উপর যে-কয়টা ফলের গাছের টব চিরকাল ধরিয়া খাড়া দড়িাইয়া আছে, তারা সকলেই যেন অন্তরে অন্তরে তাকে বিরক্ত করিতে থাকিত। পদে পদে ঘরের খাটটা, আলনাটা, আলমারিটা— তার জীবনের শন্যতাকে বিস্তারিত করিয়া ব্যাখ্যা করে ; সমস্ত জিনিসপত্রের উপর তার রাগ হইতে থাকে। সংসারে তার একমাত্র আরামের জায়গা ছিল ঐ জানালার কাছটা। যে বিশ্ববটা তার বাহিরে সেইটেই ছিল তার সব-চেয়ে আপন । কেননা, তার ঘর হইল বাহির, বাহির হইল ঘর ।” একদিন যখন বেলা দশটা— অতঃপরে যখন বাটি, বারকোষ, ধামা, চুপড়ি, শিলনোড়া ও পানের বাক্সের ভিড় জমাইয়া ঘরকন্নার বেগ প্রবল হইয়া উঠিয়াছে— এমন সময় সংসারের সমসত ব্যস্ততা হইতে স্বতন্ত্র হইয়া জানলার কাছে ষোড়শী আপনার উদাস মনকে শান্য আকাশে দিকে দিকে রওনা করিয়া দিতেছিল। হঠাৎ জয় বিশেবশবর বলিয়া হকি দিয়া এক সন্ন্যাসী তাহাদের গেটের কাছের অশথতলা হইতে বাহির হইয়া আসিল। ষোড়শীর সমস্ত দেহতন্তু মীড়টানা বীণার তারের মতো চরম ব্যাকুলতায় বাজিয়া উঠিল। সে ছটিয়া আসিয়া পিসিকে বলিল, “পিসিমা ঐ সন্ন্যাসীঠাকুরের ভোগের আয়োজন করো ৷" 嘯 এই শরে হইল। সন্ন্যাসীর সেবা ষোড়শীর জীবনের লক্ষ্য হইয়া উঠিল। এতদিন পরে শ্বশুরের কাছে বধর আবদারের পথ খলিয়াছে। মাখন উৎসাহ দেখাইয়া বলিলেন, বাড়িতে বেশ ভালোরকম একটা অতিথিশালা খোলা চাই। মাখনবাবরে কিছকাল হইতে আয় কমিতেছিল; কিন্তু, তিনি বারো টাকা সদে ধার করিয়া সংকমে' লাগিয়া গেলেন। সন্ন্যাসীও যথেষ্ট জটিতে লাগিল। তাদের মধ্যে অধিকাংশ যে খাঁটি নয়, মাখনের সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল না। কিন্তু, বউমার কাছে তার আভাস দিবার জো কী। বিশেষত