পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাত্র ও পাত্রী දෘ8ළු আমার খবে ভালো লাগত। আমার আবির্ভাব বিবের কোনো-একটা জায়গায় কোনোএকটা আকারে খুব-একটা প্রবল প্রভাব সঞ্চার করে, এই জৈব-রাসায়নিক তথ্যটা আমার কাছে বড়ো মনোরম ছিল। আমাকে দেখেও যে কেউ ভয় করে বা লজা করে, বা কোনো একটা-কিছু করে, সেটা বড়ো অপব । কাশীশ্বরী তার পালানোর স্বারাই আমাকে জানিয়ে যেত, জগতের মধ্যে সে বিশেষভাবে সম্পন্ণভাবে এবং নিগঢ়েভাবে आश्वाब्रट्टे । এতকালের অকিঞ্চিৎকরতা থেকে হঠাৎ এক মহতে এমন একান্ত গৌরবের পদ লাভ করে কিছুদিন আমার মাথার মধ্যে রক্ত কঝিা করতে লাগল। বাবা যেরকম মাকে কতব্যের বা রন্ধনের বা ব্যবস্থার ক্রটি নিয়ে সব দা ব্যাকুল করে তুলেছেন, আমিও মনে মনে তারই ছবির উপরে দাগা বলোতে লাগলম। বাবার অনভিপ্রেত কোনো-একটা লক্ষ্য সাধন করবার সময় মা যেরকম সাবধানে নানাপ্রকার মনোহর কৌশলে কাজ উদ্ধার করতেন, আমি কল্পনায় কাশীশ্বরীকেও সেই পথে প্রবত্ত হতে দেখলাম। মাঝে মাঝে মনে মনে তাকে অকাতরে এবং অকস্মাৎ মোটা অকের ব্যাকনোট থেকে আরম্ভ করে হীরের গয়না পর্যন্ত দান করতে আরম্ভ করলাম। এক-একদিন ভাত খেতে বসে তার খাওয়াই হল না এবং জানলার ধারে বসে অচিলের খট দিয়ে সে চোখের জল মচেছে এই করুণ দশ্যও আমি মনশচক্ষে দেখতে পেলাম, এবং এটা যে আমার কাছে অত্যন্ত শোচনীয় বোধ হল তা বলতে পারি নে। ছোটো ছেলেদের আত্মনিভীরতার সম্বন্ধে বাবা অত্যন্ত বেশি সতক ছিলেন। নিজের ঘর ঠিক করা, নিজের কাপড়চোপড় রাখা, সমস্তই আমাকে নিজের হাতে করতে হত । কিন্তু, আমার মনের মধ্যে গাহ'স্থ্যের যে চিত্রগুলি পষ্ট রেখায় জেগে উঠল, তার মধ্যে একটি নীচে লিখে রাখছি। বলা বাহুল্য, আমার পৈতৃক ইতিহাসে ঠিক এইরকম ঘটনাই পাবে একদিন ঘটেছিল ; এই কল্পনার মধ্যে আমার ওরিজিনালিটি কিছুই নেই। চিত্রটি এই– রবিবারে মধ্যাহ্ন-ভোজনের পর আমি খাটের উপর বালিশে ঠেসান দিয়ে পা ছড়িয়ে আধ-শোওয়া অবস্থায় খবরের কাগজ পড়ছি । হাতে গড়গড়ির নল। ঈষৎ তল্লাবেশে নলটা নীচে পড়ে গেল । বারান্দায় বসে কাশীশ্বরী ধোবাকে কাপড় দিচ্ছিল, আমি তাকে ডাক দিলাম; সে তাড়াতাড়ি ছটে এসে আমার হাতে নল তুলে দিলে। আমি তাকে বললাম, দেখো, আমার বসবার ঘরের বা দিকের আলমারির তিনের থাকে একটা নীল রঙের মলাট-দেওয়া মোটা ইংরাজি বই আছে, সেইটে নিয়ে এসো তো। কাশী একটা নীল রঙের বই এনে দিলে; আমি বললাম 'আঃ, এটা নয় ; সে এর চেয়ে মোটা, আর তার পিঠের দিকে সোনালি অক্ষরে নাম লেখা। এবারে সে একটা সবুজ রঙের বই আনলে—সেটা আমি ধপাস করে মেঝের উপর ফেলে দিয়ে রেগে উঠে পড়লাম। তখন কাশীর মখে এতটুকু হয়ে গেল এবং তার চোখ ছলছল করে উঠল। আমি গিয়ে দেখলাম, তিনের শেলফে বইটা নেই, সেটা আছে পাঁচের শেলফে। বইটা হাতে করে নিয়ে এসে নিঃশব্দে বিছানায় শলেম, কিন্তু কাশীকে ভুলের কথা কিছু বললাম না। সে মাথা হেট করে বিমষ হয়ে ধোবাকে কাপড় দিতে লাগল এবং নিবন্ধিতার দোষে স্বামীর বিশ্রামে ব্যাঘাত করেছে, এই অপরাধ কিছুতেই ভুলতে পারলে না। বাবা ডাকাতি তদন্ত করছেন, আর আমার এইভাবে দিন যাচ্ছে। এ দিকে আমার