পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলাই ૧૭૪ ওর ভাবে-ভোলা চোখট কেবল যে উপরের দিকেই তা নয়, অনেক সময় দেখেছি, ও আমার বাগানে বেড়াচ্ছে মাটির দিকে কী খুজে খাঁজে। নতুন অংকুরগুলো তাদের কোঁকড়ানো মাথাটুকু নিয়ে আলোতে ফটে উঠছে এই দেখতে তার ঔৎসক্যের সীমা নেই। প্রতিদিন ঝুকে পড়ে পড়ে তাদেরকে যেন জিজ্ঞাসা করে, তার পরে ? তার পরে ? তার পরে ? তারা ওর চির-অসমাপ্ত গল্প। সদ্য-গজিয়ে-ওঠা কচি কচি পাতা, তাদের সঙ্গে ওর কী-যে-একটা বয়স্যভাব তা ও কেমন করে প্রকাশ করবে। তারাও ওকে কী-একটা প্রশন জিজ্ঞাসা করবার জন্য অকূিপাঁকু করে। হয়তো বলে তোমার নাম ক7, হয়তো বলে তোমার মা কোথায় গেল । বলাই মনে মনে উত্তর করে, আমার মা তো নেই।’ কেউ গাছের ফলে তোলে এইটে ওর বড়ো বাজে। আর-কারও কাছে ওর এই সংকোচের কোনো মানে নেই, এটাও সে বুঝেছে । এইজন্যে ব্যথাটা লকোতে চেষ্টা করে। ওর বযসের ছেলেগুলো গাছে ঢিল মেরে মেরে আমলকি পড়ে ; ও কিছ: বলতে পারে না, সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায় । ওর সংগীরা ওকে খাiপাবার জন্যে বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ছড়ি দিয়ে দ পাশের গাছগুলোকে মারতে মারতে চলে, ফস করে বকুলগাছের একটা ডাল ভেঙে নেয়— ওর কনিতে লক্ষজা করে, পাছে সেটাকে কেউ পগলামি মনে করে । ওর সব চেযে বিপদের দিন, যেদিন ঘসিয়াড়া ঘাস কাটতে আসে। কেননা, ঘাসের ভিতরে ভিতরে ও প্রত্যহ দেখে দেখে বেড়িযেছে- এতটুকু-উ-কু লতা, বেগনি হলদে নামহারা ফল, অতি ছোটো ছোটো : মাঝে মাঝে কটিকারি গাছ, তার নীল নীল ফসলের বকের মাঝখানটিতে ছোট্ট একটুখানি সোনার ফোঁট : বেড়ার কাছে কাছে কোথাও বা কালমেঘের লতা, কোথাও বা অনন্তমলে ; পাখিতে-খাওয়া নিম ফলের বিচি পড়ে ছোটো ছোটে; চারা বেরিয়েছে, কী সুন্দর তার পাতা-– সমস্তই নিঠর নিড়নি দিয়ে দিয়ে নিড়িয়ে ফেলা হয়। তারা বাগানের শৌখিন গাছ নয়, তাদের নালিশ শোনবার কেউ নেই। এক-একদিন ওর কাকির কোলে এসে বস তার গলা জড়িয়ে বলে, “ঐ ঘাসিয়াড়াকে বলো-না, আমার ঐ গাছগুলো যেন না কাটে।” কাকি বলে, “বলাই, কী যে পাগলের মতো বকিস । ও যে সব জঙ্গল, সাফ না করলে চলবে কেন ।" বলই অনেক দিন থেকে বুঝতে পেরেছিল, কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পণে ওর একলারই— ওর চারি দিকের লোকের মধ্যে তার কোনো সাড়া নেই। এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার দিনে যেদিন সমুদ্রের গভী থেকে নতুন-জাগা পািকস্তরের মধ্যে পথিবীর ভাবী অরণ্য আপনার জন্মের প্রথম ক্ৰন্দন উঠিয়েছে- সেদিন পশ্য নেই, পাখি নেই, জীবনের কলরব নেই, চার দিকে পাথর আর পকি আর জল। কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সয্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলেছে, আমি থাকব, আমি বাঁচব, আমি চিরপথিক, মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতাঁথে যাত্রা করব রৌদ্রে-বাদলে—দিনেরাত্রে।" গাছের সেই রব আজও উঠছে বনে বনে, পবতে প্রান্তরে ; তাদেরই শাখায় পত্রে ধরণীর প্রাণ বলে বলে উঠছে, আমি থাকব, আমি থাকব। বিশ্বপ্রাণের মকে ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্ন কাল ধরে দ্যলোককে দোহন করে পথিবীর অমত