পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

여8 গল্পগুচ্ছ কিছতেই যেতে দিচ্ছি নে। ললনাম্বয় বিদায় হইলে ফকির ষষ্ঠীচরণকে বলিল, “মশায়, আপনার পত্র কেন যে সংসার ত্যাগ করে গেছেন, তা আমি সম্পণ অনুভব করতে পারছি। মশায়, আমার প্রণাম জানবেন, আমি চললেম।” বন্ধ এমনি উচ্চৈঃস্বরে ক্ৰন্দন উত্থাপন করিল যে, পাড়ার লোক মনে করিল মাখন তাহার বাপকে মারিয়াছে। তাহারা হাঁ-হাঁ করিয়া ছটিয়া আসিল। সকলে আসিয়া ফকিরকে জানাইয়া দিল, এমন ভণ্ডতপস্বীগিরি এখানে খাটিবে না। ভালোমানষের ছেলের মতো কাল কাটাইতে হইবে। একজন বলিল, “ইনি তো পরমহংস নন, পরম বক।” গাভীয’ গোঁফদাড়ি এবং গলাবন্ধের জোরে ফকিরকে এমন-সকল কুৎসিত কথা কখনো শুনিতে হয় নাই। যাহা হউক, লোকটা পাছে আবার পালায়, পাড়ার লোকেরা অত্যন্ত সতক রহিল। স্বয়ং জমিদার ষষ্ঠীচরণের পক্ষ অবলম্ববন করিলেন। Wり ফকির দেখিল এমনি কড়া পাহারা যে, মৃত্যু না হইলে ইহারা ঘরের বাহির করিবে না। একাকী ঘরে বসিয়া গান গাহিতে লাগিল— শোন সাধরে উক্তি, কিসে মুক্তি সেই সমযক্তি কর গ্রহণ। বলা বাহুল্য গানটার আধ্যাত্মিক অর্থ অনেকটা ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছে। এমন করিয়াও কোনোমতে দিন কাটিত। কিন্তু, মাখনের আগমনসংবাদ পাইয়া দই সত্রীর সম্পকের একঝাঁক শ্যালা ও শ্যালী আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহারা আসিয়াই প্রথমত ফকিরের গোঁফদাড়ি ধরিয়া টানিতে লাগিল-- তাহারা বলিল, এ তো সত্যকার গোঁফদাড়ি নয়, ছদ্মবেশ করিবার জন্য আঠা দিয়া জড়িয়া আসিয়াছে। লোকেরও মাহাত্ম্য রক্ষা করা দকের হইয়া উঠে । ইহা ছাড়া কানের উপর উপদ্রবও ছিল— প্রথমত মলিয়া, দ্বিতীয়ত এমন-সকল ভাষা প্রয়োগ করিয়া যাহাতে কান না মলিলেও কান লাল হইয়া উঠে। ইহার পর ফকিরকে তাহারা এমন-সকল গান ফরমাশ করিতে লাগিল আধুনিক বড়ো বড়ো নতন পণ্ডিতেরা যাহার কোনোরপে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করিতে হার মানেন। আবার, নিদ্রাকালে তাহারা ফকিরের স্বপোবশিষ্ট গণ্ডস্থলে চুনকালি মাখাইয়া দিল; আহারকালে কেসরের পরিবতে কচু, ডাবের জলের পরিবতে হংকার জল, দধের পরিবতে পিঠালি-গোলার আয়োজন করিল ; পিড়ার নীচে সুপারি রাখিয়া তাহাকে আছাড় খাওয়াইল, লেজ বানাইল এবং সহস্র প্রচলিত উপায়ে ফকিরের অভ্ৰভেদী গাভীব ভূমিসাৎ করিয়া দিল। ফকির রাগিয়া ফলিয়া-ফপিয়া ঝাঁকিয়া-হকিয়া কিছুতেই উপদ্রবকারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করিতে পারিল না। কেবল সবসাধারণের নিকট অধিকতর হাস্যাপদ