পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s গল্পসংগ্ৰহ তাকে ধনে প্ৰাণে বিনাশ করতেন। এরা কত লোকের ভিটামটি যে উচ্ছন্ন দিয়েছেন, তার আর ইয়ত্ত নেই। রায়বাবুদের দোহাই অমান্য করে, এত বড় বুকের পাটা বিশ ক্রোশের মধ্যে কোনও লোকেরই ছিল না। তঁদের কড়া শাসনে পরগণার মধ্যে চুরি ডাকাতি দাঙ্গাতাঙ্গামার নামগন্ধও ছিল না, তার একটি কারণ ও-অঞ্চলের লাঠিওয়াল সড়কিয়াল তীরন্দাজ প্রভৃতি যত ক্ৰৱকৰ্ম লোক, সব তঁদের সরকারে পাইক সর্দারের দলে ভর্তি হত। একদিকে যেমন মানুষের প্রতি র্তাদের নিগ্রহের সীমা ছিল না, অপরদিকে তেমনি অনুগ্রহেরও সীমা ছিল না। দরিদ্রকে অন্নবস্ত্ৰ, আতুরকে ঔষধপথ্য দান এদের নিত্যকর্মের মধ্যে ছিল। এদের অনুগত আশ্ৰিত লোকের লেখাজোখা ছিল না। এদের প্রদত্ত ব্রহ্মোত্তরের প্রসাদে দেশের গুরুপুরোহিতের দল সব জোতদার হয়ে উঠেছিলেন। তারপর পূজা আৰ্চী, দােল দুর্গোৎসবে তঁরা অকাতরে অর্থ ব্যয় করতেন। রুদ্রপুরে দোলের সময় আকাশ আবীরে, ও পূজোর সময় পৃথিবী রুধিরে লাল হয়ে উঠত। রুদ্রপুরের অতিথিশালায় নিত্য একশত অতিথি-ভোজনের আয়োজন থাকত । পিতৃদায় মাতৃদায় কন্যাদায়গ্ৰস্ত কোনও ব্রাহ্মণ, রুদ্রপুরের বাবুদের দ্বারস্থ হয়ে কখনও রিক্তহস্তে ফিরে যায়নি। এরা বলতেন ব্ৰাহ্মণের ধন বঁাধবার জন্য নয়-সৎকার্যে ব্যয় করবার জন্য। সুতরাং সৎকার্ষে ব্যয় করবার টাকার যদি কখনও অভাব হত, তাহলে বাবুরী (अ का সী-মহাজনদের ঘর লুঠে নিয়ে আসতেও কুষ্ঠিত হতেন না। এক কথায়, এরা ভাল কাজ মন্দ কাজ সব নিজের খেয়াল ও মজি অনুসারে করতেন ; কেননা নবাবের আমলে তঁদের কোনও শাসনকর্তা ছিল না। ফলে, জনসাধারণে তঁদের যেমন ভয় করত, তেমনি ভক্তিও করত, তার কারণ তঁরা জনসাধারণকে ভক্তিও করতেন না, ভয়ও করতেন না। এই অবাধ যথেচ্ছাচারের ফলে তঁদের মনে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে ধারণা উত্তরোত্তর অসাধারণ বৃদ্ধিলাভ করেছিল। তঁদের মনে যা ছিল, সে হচ্ছে জাতির অহঙ্কার, ধনের অহঙ্কার, বলের অহঙ্কার, রূপের অহঙ্কার। রায় পরিবারের পুরুষেরা সকলেই গৌরবর্ণ, দীর্ঘাকৃতি ও