পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRR १iनल९१श् জন্য থিয়েটারে পুনঃপ্রবেশ করবার সঙ্কল্প করলেন। অমনি তার মনশ্চক্ষু হতে বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড সরে গেল, আর তার জায়গায় পটেশ্বরী এসে দাঁড়ালে। অসংখ্য অপরিচিত অসভ্য ও আমোদপ্ৰিয় লোকের মধ্যে তার স্ত্রী এক বসে রয়েছে-এই মনে করে তার হৃৎকম্প উপস্থিত হল। তিনি যেন স্পষ্টই দেখতে পেলেন যে, চিকের আবরণ ভেদ করে শত শত লোলুপিনেত্রের আরক্তদৃষ্টি পটেশ্বরীর দেহকে স্পর্শ করছে, অঙ্কিত করছে, কলঙ্কিত করছে। এর পর বড়বাবুর পক্ষে আর এক মুহূর্তও বাইরে থাকা সম্ভব হল না, তিনি পাগলের মত ছুটে গিয়ে আবার থিয়েটারের ভিতরে প্রবেশ করলেন । এবার তার আর অভিনয় দেখা হল না ; তার চোখের সুমুখে কোথেকে যেন একটি ঘন কুয়াশা উঠে এসে, চারদিক ঝাপসা করে দিলে। দেখতে না দেখতেই অভিনয় ছায়াবাজি হয়ে দাঁড়াল। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কতক কথা তার কাণে ঢুকলেও, তার একটি কথাও তাঁর মনে দুকল না। কেননা, সে মনের ভিতর শুধু একটি কথা জাগছিল, উঠছিল, পড়ছিল। যে স্ত্রীলোক খিলখিল করে হেসে উঠেছিল, সে পটেশ্বরী-কি পটেশ্বরী নয় ? এই ভাবনা, এই চিন্তাই তাঁর সমস্ত মনকে অধিকার করে বসেছিল। তিনি বারবার সেই জেনানা-বক্সের দিকে চেয়ে দেখতে লাগলেন, এবং প্রতিবার তাঁর মনে হল যে, এ পটেশ্বরী না হয়ে আর যায় না। শুধু তাই নয়, তিনি রঙ্গালয়ের অন্দরমহলের যেদিকে দৃষ্টিপাত করলেন—সেই দিকেই দেখলেন পটেশ্বরী বসে আছে। ক্রমে এই দৃশ্য স্ত্রার কাছে এত অসহ্যু হয়ে উঠল যে, তিনি চােখ বুজলেন। তাতেও কোন ফল হল না। তাঁর বোজা চোখের সুমুখেও পটেশ্বরী এসে উপস্থিত হল, পরণে সেই কালা কস্তাপেড়ে শাড়ী, আর মুখ সেই চিকে ঢাকা। তখন তাঁর জ্ঞান হল যে, তার মনে যে সন্দেহের উদয় হয়েছে তা দূর করতে না পারলে, তিনি সত্য সত্যই পাগল হয়ে যাবেন । তাই তিনি শেষটা মন স্থির করলেন যে, থিয়েটার ভাঙ্গাবার মুখে, যে দরজা দিয়ে মেয়েরা বেরোয়, সেই দরজার সুমুখে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। কেননা একবার সামনাসামনি স্বচক্ষে না দেখলে, তঁর মনের এ সন্দেহ আর কিছুতেই দূর হবে না।