পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R8 গল্পসংগ্ৰহ গাড়ীতে ঢুকতেই তিনি শশব্যন্তে উঠে পড়ে আমার বসবার জন্য জায়গা করে দিলেন। আমি তীকে ধন্যবাদ দিয়ে বসে পড়লুম ; কিন্তু আমার চোেখ পড়ে রইল ঐ সাধুটিরই উপর। প্রথমেই নজরে পড়ল, তিনি একটি মহাপুরুষ না হলেও, একটি প্ৰকাণ্ড পুরুষ। তাঁর তুলনায় কৰ্ণেল সাহেবটি ছিলেন একটি ছোকরা মাত্র। স্বামীজী যেমন লম্বা তেমনই চওড়া। চােখের আন্দাজে বুঝলুম যে, তার বুকের বেড় অন্তত ৪৮ ইঞ্চি হবে। অথচ তিনি স্কুল নন। এ শরীর যে কুস্তিগীর পালোয়ানের সে বিষয়ে আমার মনে কোনো সন্দেহ রইল না। কুস্তিগীর হলেও তার চেহারাতে চােয়াড়ে ভােব ছিল না। তার বর্ণ ছিল গৌর, অর্থাৎ তামাতে রূপের খাদ দিলে এই উভয় ধাতু মিলে ষে রঙের সৃষ্টি করে, সেই গোছের রঙ । তঁর চোখের তারা দুটি ছিল ফিরোজার মত নীল ও নিরেট। এ রকম নিষ্ঠুর চােখ আর্মি মানুষের মুখে ইতিপূর্বে দেখিনি। তাঁর গায়ে ছিল গেরুয়া রংয়ের রেশমের আলখাল্লা, মাথায় প্রকাণ্ড গেরুয়া পাগড়ী ও পায়ে পেশোয়ারী চাপলি। তঁকে দেখে আমি একটু ভাবােচাকা খেয়ে গেলুম, কারণ পাঠান যে সাধু হয়, তা আমি জানতুম না ; আর আমি ধরে নিয়েছিলুম যে, এ ব্যক্তি পাঠান না হয়ে যায় না। এর মুখে-চােখে একটা নিৰ্ভীক বেপরোয় ভােব ছিল যা এ দেশের কি গৃহস্থ, কি সন্ন্যাসী, কারও মুখে সচরাচর দেখা যায় না। V. 多 আমি হাঁ করে তঁর মুখের দিকে চেয়ে রয়েছি দেখে, সন্ন্যাসী আমাকে বাঙ্গলায় বললেন “মশায় কি মনে করছেন যে, আমি ভুল করে এ গাড়ীতে উঠেছি, —থার্ড ক্লাস ভেবে ফাস্ট ক্লাসে ঢুকেছি ? অত কাণ্ডজ্ঞানশূন্য আমি নই,-“এই দেখুন আমার টিকিট।” কথাটা শুনে আমি একটু অপ্ৰস্তুতভাবে বললুম—“না, তা কেন মনে করব। আজকাল অনেক সাধুসন্ন্যাসীই ত দেখতে পাই ফাস্ট ক্লাসেই যাতায়াত করেন। এমন কি, কেউ কেউ একা একটি সেলুন অধিকার করে বসে থাকেন।”