পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S ጫ8 গল্পসংগ্ৰহ 'Ꮽ) বাবার জীবনের প্রধান সখ ছিল শিকার। তাই তিনি বারোমাস বন্দুক, ঘোড়া ও কুকুর নিয়েই মত্ত থাকতেন। আমরাও তাই জন্মাবধি বারুদ, কুকুর ও ঘোড়ার গন্ধ শুকে শুকেই বড় হয়েছি। কুকুর যে চোখে দেখে না, গন্ধ শুকেই জানোয়ার চেনে, এ কথা ত আপনার সবাই জানেন ; কিন্তু নানা জাতীয় কুকুরের গায়ে যে নানারকমের রঙের মত নানারকমের গন্ধ আছে, তা বোধ হয় আপনারা লক্ষ্য করেননি। ওদের আভিজাত্যের পরিচয় ওদের গন্ধেই পাওয়া যায়। ফুলেরও যেমন, কুকুরেরও তেমনি, রূপের সঙ্গে গন্ধের একটা নিত্য সম্বন্ধ আছে। যাক ও সব কথা । আমার বয়স যখন ছয় ও সাতের মাঝামাঝি-বাবা একটি নীলকুঠেল সাহেবের কাছ থেকে গুটিকয়েক শিকারী কুকুর কিনে নিয়ে এলেন। একটি বুলডগ, দুটি গ্রে-হাউণ্ড, দুটি ফক্স আর একটি বুল-টেরিয়র। গ্রে-হাউণ্ড দুটি বাঙলায় যাকে বলে “ডালকুত্তী”-দেখতে ঠিক হরিণের মত, সেই রঙ, সেই চোখ, মাথায় শুধু শিং নেই, আর ছুটতেও তদ্রুপ। বুলডগটির রূপের কথা আর বলে কায নেই। তার মুখ নাক বলে কোন জিনিস ছিল না, চোখ দুটি একদম গোল। তার মুখে থাকবার ভিতর ছিল শুধু দুপাটি দাতা। সে কাউকে কামড়াবামাত্র তার চোয়াল আটকে যেত, আর তখন তার মুখের ভিতর লোহার শিক পূরে দিয়ে মক্ষম চাড় দিয়ে তবে মুখ খোলা যেত। নীলকুঠিল সাহেবের কৃষ্ণপক্ষের মেম, কুঠার হেড বরকন্দাজ উমেশ সর্দারের মেয়ে টগর বিবি, তার দাম চড়াবার জন্য বাবাকে বলেছিল যে, “পেলােগ ধরবেক তা ছাড়বেক না।” “পেলােগ” হচ্ছে অবশ্য ইংরাজী Pluck rics বুনো অপভ্রংশ। এ কথা যে সত্য তার প্রমাণ আমরা দুদিন না যেতেই পেলুম। পাড়ার বাগদীদের একটা মস্ত কুকুর ছিল। সে আসলে দেশী হলেও বিলেতির বেনামিতে চলে যেত। যেমন দেশী খ্ৰীষ্টানেরও কখনও কখনও বিলেতি নাম থাকে, তেমনই তারও নাম