পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নীল-লোহিতের আদিগ্ৰেম Wys দেশে, তার সন্ধান কেউ জানে না। অতঃপর তিনি প্যারীলালের শুভাগমনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। Ο Σ এদিকে অবনীভূষণের চরিত্রের যত অবনতি ঘটতে লাগল, তার স্ত্রীর মনের চরিত্র তত তীর অন্তর্নিহিত সৌন্দমে ফুটে উঠতে লাগল ; তার স্বামীদেবতা অপদেবতায় পরিণত হওয়ায় তঁর মন অবশ্য অত্যন্ত পীড়িত হল, কিন্তু এই পীড়াই তার চরিত্রের সুপ্তশক্তিকে জাগিয়ে তুললে। অবনীভূষণের স্ত্রীপূজা তিনি কখনই প্ৰফুল্লমাণ গ্রাহ্য করতে পারেননি। তিনি জানতেন। তিনি মানুষ্য-দেবতা নন। এবং পর্যকে ২ ভালবাসা ও পরের জন্য আত্মোৎসর্গ করবার প্রবৃত্তিও মানবধর্ম । তিনি কোনকালেই স্বামীর কাছ থেকে পূজা চাননি, স্বামীকেই পূজা করতে চেয়েছিলেন । তা ছাড়া স্বামী|স্ত্রীতে কপোত-কপোতীর মত মুখে মুখ দিয়ে বসে থাকাটা তার কোনকালেই মনোমত ছিল না। তিনি চাইতেন কাজ করতে, আর পাঁচজনের সেবা করতে। তার স্বামীর এই স্ত্রীমোহটা তার কাছে চিরদিনই বিপজ্জনক মনে হত। ধনীর সন্তানের বনিতাবিলাস। তঁর কাছে মনে হত তাদের কর্মহীনতার একটা বিশেষ প্রকাশমাত্র ; আর এ বিলাস কাকে যে কোন বিপথে টেনে নিয়ে যাবে, কে বলতে পারে ? তবে অবনীভূষণ যে আর পাঁচজন ধনী ব্যক্তির জাত নন, এ বিশ্বাস তীর ছিল। সুতরাং আর পাঁচজন অপদাৰ্থ লোকের কপালে যে দুর্দশা ঘটে, অবনীভূষণ যে সেরূপ দুৰ্দশাপন্ন হবেন, সে ভয় র্তার ছিল না। তাই অবনীভূষণের চরিত্রবিকারের পরিচয় পেয়ে, उिनि নিতান্ত কাতর হয়ে পড়লেন ও ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করলেন। এর ফলে তাঁর মনে নূতন শক্তি, নূতন সৌন্দৰ্য জন্মলাভ করলে। তিনি ছিলেন মানবী, হয়ে উঠলেন দেবী। তখন তীর প্রশান্ত, স্নিগ্ধ, করুণ দৃষ্টি যার উপরে পড়ত, তাকেই পবিত্র করে তুলত। এসব কথা আমি অবনীভূষণের মুখেই শুনেৰ্চি-কি অবস্থায় আর কি সূত্রে, তা পরে বলছি।