পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চার-ইয়ারী-কথা २ १ একটু ত্ৰস্তভাবে মুখ ফিরিয়ে দেখি যে, পিছনে গলা থেকে পা পর্যন্ত আগাগোড়া কালো কাপড়-পরা একটি স্ত্রীলোক, লেজে ভর দিয়ে সাপের মত, ফণা ধরে দাঁড়িয়ে আছে । আমি তার দিকে হঁ-করে চেয়ে রয়েছি দেখে, সে চােখ ফেরালে না। পূর্বপরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা হলে লোকে যেরকম করে হাসে, সেইরকম মুখ-টিপে টিপে হাসতে লাগল,—অথচ আমি হলপ করে বলতে পারি যে, এ-স্ত্রীলোকের সঙ্গে ইহজন্মে। আমার কস্মিনকালেও দেখা হয়নি। আমি এই হাসির রহস্য বুঝতে না পেরে, ঈষৎ অপ্রতিভভাবে তার দিকে পিছন ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে, একখানি বই খুলে দেখতে লাগলুম। কিন্তু তার একচ্চত্রও আমার চোখে পড়ল না। আমার মনে হতে লাগল যে, তার চোখ-দুটি যেন ছুরির মত আমার পিঠে বিধছে। এতে আমার এত আসোয়াস্তি করতে লাগল যে, আমি আবার তার দিকে ফিরে দাঁড়ালুম। দেখি সেই মুখটেপা হাসি তার লেগেই রয়েছে। ভাল করে নিরীক্ষণ করে দেখলুম। যে, এ তার্সি তার মুখের নয়,-চােখের। ইস্পাতের মত নীল, ইস্পাতের মত কঠিন দুটি চোখের কোণ থেকে সে হাসি ছুরির ধারের মত চিক্‌মিক করছে। আমি সে দৃষ্টি এড়াবার যত বার চেষ্টা করলুম, আমার চােখ তােত বার ফিরে ফিরে সেইদিকেই গেল । শুনতে পাহ, কোন কোন সাপের চোখে এমন আকর্ষণী শক্তি আছে, যার টানে গাছের পাখা মাটিতে নেমে আসে, —হাজার পাখা-ঝাপটা দিয়েও জুড় যেতে পারে না। আমার মনের অবস্থা ঐ পাখীর মতই হয়েছিল । বলা বাহুল্য ইতিমধ্যে আমার মনে নেশা ধরেছিল,-ঐ পাচুলির গন্ধ আর ঐ চোখের আলো, এই দুইয়ে মিশে আমার শরীর-মন দুই-ই উত্তেজিত করে তুলেছিল। আমার মাগার ঠিক ছিল না, সুতরাং তখন যে কি করছিলুম তা আমি জানিনে। শুধু এইটুকু মনে আছে যে, হঠাৎ তার গায়ে আমার গায়ে ধাক্কা লাগল। আমি মাপ চাইলুম ; সে হাসিমুখে উত্তর করলে-“আমার দোষ, তোমার নয়।” তার গলার স্বরে আমার বুকের ভিতর কি-যেন ঈষৎ কেঁপে উঠল, কেননা সে আওয়াজ বাঁশির নয়, তারের যন্ত্রের। তাতে জোয়ারি ছিল। এই কথার পর আমরা এমনভাবে