পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V9Itz- **32 আমরা ঘোড়া ছুটিয়ে সেই আলোর দিকে এগোতে লাগলুম। গিয়ে দেখি একটি ছোট বাঙ্গলো, আর তার বারান্দায় এক ভোজপুরী দারোয়ান একটি হারিকেন লণ্ঠন সুমুখে করে বসে আছে। তার কাছে জিজ্ঞাসা করায় সে বললে--আপনার পথ ভুলে রঙ্গারুণ পথে ঢুকেছেন, আর প্ৰায় সোনাদহের কাছাকাছি এসেছেন। আজ রাত্তিরে যদি দাৰ্জিলিং ফিরতে চান, তাহলে আমি যে পথ দেখিয়ে দিচ্ছি--সোজা সেই পথে চলে যাবেন ; ডাইনেও বেঁকবেন না, বীয়েও বেঁকবেন না। একথা শুনে আমাদের ধড়ে প্ৰাণ এল । এর পরে আমরা মরিয়া হয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলুম। ভয়ে মানুষ যে কি রকম সাহসী হয়, তার প্রমাণ আমাদের সে রাত্রের ঘোড়দৌড়। প্ৰায় অর্ধেক পথ এসেছি, এমন সময় আমাদের মধ্যে একজন ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন, আর খাদের ভিতর গড়াতে গড়াতে গিয়ে একটা গাছের গুড়িতে আটকে গেলেন। তঁর ঘোড়াটা কিন্তু সেইখানেই দাঁড়িয়ে রইল। বন্ধুবর অতঃপর কোনরকমে হাঁচড়ে পাঁচড়ে উপরে উঠে, ফের ঘোড়ায় চড়লেন ; বললেন, তীর কোথায়ও কিছু লাগেনি। রাত যখন নটা বাজল, তখন আমরা যেখানে “This way to sinchal” লেখা ছিল, সেইখানে পৌঁছলুম; তারপর বড় রাস্ত ধরে রাত দশটায় বাড়ী পৌঁছলুম। এ গল্প হচ্ছে, যে বিপদ হতে পারত। কিন্তু হয়নি।--তারই গল্প। আমাদের বাঙ্গালীর পক্ষে এই অ্যাডভেঞ্চারই যুৎসই। এ গল্প আমার বন্ধুরা এত ফুলপাতা দিয়ে সাজিয়ে আমার আত্মীয়-স্বজনকে বলেছিলেন যে, তার পুনরাবৃত্তি করতে গেলে এই ছোট গল্প একটি উপন্যাস হয়ে উঠবে। আর সে লম্বা গল্প শুনে তোমরা খুসি হবে কিনা জানিনে, যদিচ আমার গুরুজনেরা শুনে চমৎকৃত হয়ে গিয়েছিলেন। আমি বাদে বাকী চারজন কি অদ্ভুত বীরত্ব দেখিয়েছিলেন, সে তারই দেড়শ” পাতা কাহিনী। এ গল্পের নৈতিক উপদেশের একটা লেজ আছে। সে উপদেশ হচ্ছে এই-কখনও ভুল পথে যেয়ে না। আর বুড়োরা যে পথে যায় না, সেইটেই ভুল পথ।