পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীণাবাই সূত্রপাত এ গল্প আমার ঘোষালের মুখে শোনা। এ কথা আগে থাকতেই বলে রাখা ভাল। নইলে লোকে হয়ত ভাববে যে, এ গল্প আমিষ্ট বানিয়েছি। কারণ ঘোেষালের গল্পের যা প্রধান গুণ, স্মৃতি—এ গল্পের মধ্যে তার লেশমাত্র নেই। এ গল্প বৈঠকী গল্প নয়, অর্থাৎ রায়মশায়ের বৈঠকখানায় বলা নয় ;-আমার ঘরে বসে নিরিবিলি একমাত্র আমাকে বলা । কোন অবস্থায়-বলছি । আমি একদিন জনকতক বন্ধুকে আমার বাড়ীতে চায়ের নিমন্ত্রণ করি ; আমার বন্ধুরা সকলেই সুশিক্ষিত ও গানবাজনার জহুৱী। তঁরা যে গাইয়ে-বাজিয়ে ছিলেন, তা অবশ্য নয়; কিন্তু সকলেই সঙ্গীতশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ । এর থেকে মনে ভাববেন না যে, তঁরা সংস্কৃতভাষায় লিখিত সঙ্গীতশাস্ত্রের সঙ্গে পরিচিত। তঁরা তাদের শাস্ত্ৰজ্ঞান লাভ করেছেন সেই সব নিরক্ষর মুসলমান ওস্তাদদের কাছ থেকে, যারা সকলেই মিঞা তানসেনের বংশধর, আর এ বিদ্যে র্যাদের খানদানী। আমি এ চা-পাটিতে যোগ দিতে ঘোষালকে নিমন্ত্রণ করেছিলুম ;- উদ্দেশ্য, বন্ধুবান্ধবকে ঘোষালের গান শোনান। সেদিন সঙ্গীতশাস্ত্রেরই চর্চা হল। ঘোষাল শরীর ভাল নেই’ অজুহাতে গান গাইতে মোটেই রাজী হল না। ঘোষালের এই বে-দস্তুর ব্যবহারে আমি একটু আশ্চর্য হয়ে গেলুম। বন্ধুবান্ধবরা চলে গেলে পর ঘোষাল বললে-“আমি গানবাজনার সায়েন্স জানিনে। জানি শুধু আর্ট। আর আমার বিশ্বাস এ ক্ষেত্রে সায়েন্স আর্ট থেকে বেরিয়েছে—আর্ট সায়েন্স থেকে বেরোয়নি। হার্মেনিয়মের অতিরিক্ত ধ্বনি আছে, অর্থাৎ অতিকোমল অতিতীক্ষ্ম সুরও অবশ্য আছে। কিন্তু যা গানের প্রাণ, তা হচ্ছে অতীন্দ্ৰিয় সুর-আর এই অতীন্দ্ৰিয় সুরের সন্ধান যিনি জানেন তিনিই