পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8o গল্পসংগ্ৰহ সে টেবিলে এই স্ত্রীলোকটি একটি জাঁদরেলি-চেহারার পুরুষের সঙ্গে ডিনার খাচ্ছিলেন। সে ভদ্রলোকের মুখের রং এত লাল যে, দেখলে মনে হয় কে যেন তার সদ্য ছাল ছাড়িয়ে নিয়েছে। পুরুষটি যা বলছিলেন, সে সব কথা তার গোঁফেই আটকে যাচ্ছিল, আমাদের কানে পৌছচ্ছিল না। তঁর সঙ্গিনীও তা কানে তুলছিলেন। কিনা, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। কেননা, স্ত্রীলোকটি যদিচ আমাদের দিকে একবারও মুখ ফেরাননি, তবু তার মুখের ভাব থেকে বােঝা যাচ্ছিল যে, তিনি আমাদের কথাই কান পেতে শুনছিলেন । যখন আমি কোন প্রশ্ন শুনে, কি উত্তর দেব ভাবছি, তখন দেখি তিনি আহার বন্ধ করে, তঁর সুমুখের প্লেটের দিকে অন্যমনস্ক ভাবে চেয়ে রয়েছেন,-আর যেই আমি একটু গুছিয়ে উত্তর দিচ্ছি, তখনি দেখি তার চােখের কোণে একটু সকৌতুক হাসি দেখা দিচ্ছে। আসলে আমাদের এই আলোচনা শুনে র্তার খুব মজা লাগছিল। কিন্তু আমি শুধু ভাবছিলুম এই ডিনারভোগরূপ কৰ্মভোগ থেকে কখন উদ্ধার পাব । অতঃপর যখন টেবিল ছেড়ে সকলেই উঠলেন, সেই সঙ্গে আমিও উঠে পালাবার চেষ্টা করছি, এমন সময়ে এই বিলাতি ব্ৰহ্মবাদিনী গাৰ্গী আমাকে বললেন-“তোমার সঙ্গে হিন্দুদর্শনের আলোচনা করে আমি এত আনন্দ আর এত শিক্ষা লাভ করেছি যে, তোমাকে আর আমি ছাড়ছিনে। জান, উপনিষদই হচ্ছে আমার মনের ওষুধ ও পথ্য।” আমি মনে মনে বল্লুম—“তোমার যে কোন ওষুধ পথ্যির দরকার আছে, তাত তোমার চেহারা দেখে মনে হয় না! সে যাই হােক, তোমার যত খুসি তুমি তত জর্মনীর লেবরেটরিতে তৈরী বেদান্ত-ভস্ম সেবন কর, কিন্তু আমাকে যে কেন তার অনুপান যোগাতে হবে, তা বুঝতে পারছিনে।” তঁর মুখ চলতেই লাগল। তিনি বললেন-“আমি জর্মনীতে Duessen-এর কাছে বেদান্ত পড়েছি, কিন্তু তুমি যত পণ্ডিতের নাম জান, ও যত বিভিন্ন মতের সন্ধান জান, আমার গুরু। তার সিকির সিকিও জানেন না । বেদান্ত পড়া ত চিন্তারাজ্যের হিমালয়ে চড়া, শঙ্কর তা জ্ঞানের গৌরীশঙ্কর। সেখানে কি শান্তি, কি শৈত্য, কি শুভ্রতা, কি উচ্চতা-মনে করতে গেলেও মাথা