পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চার-ইয়ারী-কথা SS ঘুরে যায়। হিন্দুদর্শন যে যেমন উচ্চ তেমনি বিস্তৃত, এ কথা আমি জানতুম না। চল, তোমার কাছ থেকে আমি এই সব অচেনা পণ্ডিত অজানা বইয়ের নাম লিখে নেব।” এ কথা শুনে আমার আতঙ্ক উপস্থিত হল, কেননা শাস্ত্রে বলে, মিথ্যে কথা৷-“শতং বদ মা লিখ” ! বলা বাহুল্য যে আমি যত বইয়ের নাম করি তার একটিও নেই, আর যত পণ্ডিতের নাম করি তঁরা সবাই সশরীরে বর্তমান থাকলেও, তার একজনও শাস্ত্রী নন। আমার পরিচিত যত গুরু, পুরোহিত, দৈবজ্ঞ, কুলঞ্জ, আচার্য, অগ্ৰদানী---এমন কি রাধুনে-বামন পর্যন্ত-আমার প্রসাদে সব মহামহোপাধ্যায় হয়ে উঠেছিলেন। এ অবস্থায় আমি কি করব না ভেবে পেয়ে, ন যযৌ ন তস্থৌ ভাবে অবস্থিতি করছি, এমন সময় পাশের টেবিল থেকে সেই স্ত্রীলোকটি উঠে, এক মুখ হাসি নিয়ে আমার সুমুখে এসে দাঁড়িয়ে বল্লেন--“বা । তুমি এখানে ? ভাল আছে তা ? অনেক দিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি। চল আমার সঙ্গে ড্রয়িং-রুমে, তোমার সঙ্গে একরাশ কথা আছে।” আমি বিনা বাক্যব্যয়ে তার পদানুসরণ করলুম। প্রথমেই আমার চোখে পড়ল যে, এই রমণীটির শরীরের গড়ন ও চলবার ভঙ্গীতে, শিকারী-চিতার মত একটা লিকলিকে ভাব আছে। ইতিমধ্যে আড়চােখে একবার দেখে নিলুম যে, গাৰ্গী এবং তঁর কন্যা হাঁ করে আমাদের দিকে চেয়ে রয়েছেন, যেন তাদের মুখের গ্রাস কে কেড়ে নিয়েছেএবং সে এত ক্ষিপ্ৰহস্তে যে তঁরা মুখ বন্ধ করবার অবসর পাননি ! ড্রয়িং-রুমে প্ৰবেশ করবামাত্র, আমার এই বিপদ-তারিণী আমার দিকে ঈষৎ ঘাড় বঁকিয়ে বললেন, “ঘণ্টাখানেক ধরে তোমার উপর যে উৎপীড়ন হচ্ছিল। আমার আর তা সহ্যু হল না, তাই তোমাকে ঐ জর্মণ পশু দুটির হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি । তোমার যে কি বিপদ কেটে গেছে, তা তুমি জান না। মা'র দর্শনের পালা শেষ তলেঙ্গ, মেয়ের কবিত্বের পালা আরম্ভ হত। তুমি ওই সব নেকড়ার পুতুলদের চেন না। ওই সব স্ত্রীরত্বদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেন তেন প্রকারেণ পুরুষের গললগ্ন হওয়া। পুরুষমানুষ দেখলে ওদের Ꮤ2