পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

so झ३ॐंश বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলুম। চারিদিকে শুধু মােঠ ধৃ ধূ করছে, ঘর নেই দোর নেই, গাছ নেই পালা নেই, শুধু মাঠ-অফুরন্ত মাঠ-আগাগোড়া সমতল ও সমরূপ, আকাশের মত বাধাহীন এবং ফাঁকা । কলকাতার ইটকাঠের পায়রার খোপের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃতির এই অসীম উদারতার মধ্যে আমার অন্তরাত্মা মুক্তির আনন্দ অনুভব করতে লাগল। আমার মন থেকে সব ভাবনা চিন্তা ঝরে গিয়ে সে মন ঐ আকাশের মত নিৰ্নিকার ও প্ৰসন্নরূপ ধারণ করলে,-তার মধ্যে যা ছিল, সে হচ্ছে আনন্দের ঈষৎ রক্তিম আভা । কিন্তু এ আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না, কেননা দিনের সঙ্গে রোদ, প্রকৃতির গায়ের জুরের মত বেড়ে উঠতে লাগল, আকাশ বাতাসের উত্তাপ, দেখতে দেখতে একশ’ পাঁচ ডিগ্রীতে চড়ে গেল। যখন বেলা প্ৰায় ন’টা বাজে, তখন দেখি বাইরের দিকে আর চাওয়া যায় না ; আলোয় চোেখ ঝলসে যাচ্ছে। আমার চোখ একটা কিছু সবুজ পদার্থের জন্য লালায়িত হয়ে দিগদিগন্তে তার অন্বেষণ করে এখানে ওখানে দুটি একটি বাদল গাছের সাক্ষাৎ লাভ করলে। বলা বাহুল্য, এতে চোখের পিপাসা মিটাল না, কেননা এ গাছের আর যে গুণাই থাক, এর গায়ে শ্যামল-শ্ৰী নেই, পায়ের নীচে নীল ছায়া নেই। এই তরুহীন, পত্ৰহীন, চায়াহীন পৃথিবী আর মেঘমুক্ত রৌদ্রপীড়িত আকাশের মধ্যে ক্ৰমে একটি বিরাট অবসাদের মুর্তি ফুটে উঠল। প্ৰকৃতির এই একঘেয়ে চেহারা আমার চোখে আর সহ্যু হল না। আমি একখানি বই খুলে পড়বার চেষ্টা করলুম। সঙ্গে Meredith-এর Egoist এনেছিলুম, তার শেষ চ্যাপ্টার পড়তে বাকী ছিল। একটানা দু’চার পাতা পড়ে দেখি তার শেষ চ্যাপ্টার তার প্রথম চ্যাপ্টার হয়ে উঠেছে,-অর্থাৎ তার একবৰ্ণও আমার মাথায় ঢুকল না। বুঝলুম পান্ধির অবিশ্রাম বাঁকুনিতে আমার মস্তিষ্ক বেবাক ঘুলিয়ে গেছে। আমি বই বন্ধ করে পাঙ্কি-বোহারাদের একটু চাল বাড়াতে অনুরোধ করলুম, এবং সেই সঙ্গে বকশিষের লোভ দেখালুম। এতে ফল হল। অর্ধেক পথে যে গ্রামটিতে আমাদের বিশ্রাম করবার কথা ছিল, সেখানে বেলা সাড়ে দশটায়, অর্থাৎ মেয়াদের আধঘণ্টা আগে গিয়ে পৌঁচলুম।