পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ২৫ )

উঠেন— “হ্যাঁ বীর বই,কি—তা আবার বলিতে, সে দিন পাঁটা বলি দেখিয়া মূর্চ্ছা গিয়াছিলেন। বীরের হাতে গোটা কতক পাঁকাটীর লাঠী আনিয়া দাও।”

 এইরূপে গ্রাম-শুদ্ধ ছেলেরা দীনর প্রাণান্ত করিয়া তুলিয়াছে, উপহাসের জ্বালায় সে অস্থির। দীন বেচার অস্থির হইয়া, কিসে যে তাহাদের হাত হইতে উদ্ধার পাইবে তাহা ভাবিয়া পায় না। কিসে তাহারা তাহাকে ভাল বলিবে প্রাণপণে তাহার চেষ্টা করে। ছেলেরা পাখীর ছানা পাড়িতে গেলে দীন উমেদার হইয়া তাহার সঙ্গে যায়, আগেভাগে তাড়াতাড়ি গাছে উঠিয়া আপনার পুরুষত্ব বজায় রাখিবার চেষ্টা করে। এরূপ কাজ যদিও তাহার একেবারেই ভাল লাগে না, তথাপি সে লজ্জার খাতিরে উপহাসের ভয়ে তাহা করিতে প্রস্তুত। দীন বড় দুর্ব্বল, সে তাহার সঙ্গীদিগের উপহাস কোন মতেই সহিতে পারে না। বরঞ্চ সে পাখীর ছানা পাড়িয়া—নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করিয়া—মনে মনে কষ্ট সহিতে পারে, তথাপি বন্ধুদের হাসিবার কাজ করিয়া উপহাসের পাত্র হইতে চাহে না। ছেলেরা—দড়িতে ঢিল বাঁধিয়া তাহা ছুঁড়িয়া পাখী মারে,—দীন আগে কখনও তাহা করিত না কিন্তু সেই ঘটনার পর হইতে সে নিজেই অগ্রসর হইয়া ঢিল ছুঁড়ে। এইরূপে নানা প্রকারে আপনার বীরত্ব দেখাইয়া সঙ্গীদের মন হইতে সেই দিনকার ঘটনাটা মুছিয়া ফেলিতে চায়।

 একদিন গ্রামের দুই চারিজন বালক পাখী মারিতে যাইবে স্থির করিয়া দীননাথের বাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহাদের দেখিয়া দীন বুঝিল তাহারা তাহাকে ডাকিতে আসিয়াছে।