পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ৪১ )

 রায়পুরের বাগানটির বড় শোভা হইয়াছে। গাছে গাছে লতা উঠিয়াছে, পাতায় পাতায় বিকাল বেলার সূর্য্যের সোনার কিরণ ঝিকঝিক করিতেছে,বকুল ও কামিনীর তলায় ফুলের তারা ফুটিতে আরম্ভ হইয়াছে। বাগানের মাঝে মাঝে দুর্ব্বাদলের ঘন বনগুলি ছোট ছোট ছেলে মেয়েদিগের জন্য বিছানা পাতিয়া রাখিয়াছে। রায়পুরের যত বালিকা এসময় এখানে খেলিতে আসিয়াছে। কেহবা ফুল কুড়াইতেছে, কেহবা ঘুটিম খেলিতেছে, কেহবা গাছের তলায় ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইতেছে।

 ঐখানে একটি বকুল গাছের তলায় অমলা ও বিমলা ফুল কুড়াইতে মত্ত। টুপ! টাপ করিয়া একবার এখানে একবার ওখানে, একবার অমলার মাথায়, একবার বিমলার গায়ে ফুল পড়িতেছে। তাহারা একটি তুলিতে গিয়া একটি মাড়াইতেছে, কতক গুলি আঁচলে রাখিবার সময় কতকগুলি ফেলিয়া দিতেছে।

 ফুল তুলিতে তুলিতে বিমলা সহসা একবার সোজা হইয়া দাঁড়াইয়া ত্রস্তে বলিয়া উঠিল—“ও অমলা, ঐ দিকে চল ভাই, ঐ আস্‌চে।” অমলা মুখ তুলিয়া দেখিল লক্ষ্মী আসিতেছে, ভয়ে অমলার আঁচল হইতে ফুল পড়িয়া গেল, পা আর সরিল না, থতমত খাইয়া দাঁড়াইল।

 দেখিতে দেখিতে লক্ষ্মী আসিয়া উপস্থিত হইল। লক্ষ্মী অন্য বালিকাদের প্রতি বড় অত্যাচার করিত। সেই জন্য তাহাকে সকলে ভয় করে, তাহাকে সকলে যমের মত দেখে। কিন্তু লক্ষ্মীর পিতা গ্রামের মধ্যে ধনী, সেই জন্য লক্ষ্মী যাহাই করুক অন্য কেহ তাহাতে কথা কহিতে সাহস পায় না—লক্ষ্মীও দেখে কিছুতেই তাহার শাস্তি হয় না, সেও নির্ভয়ে যাহা ইচ্ছা করে।