( 88 )
* * * *
* * * *
ইহার পর কত দিন চলিয়া গিয়াছে, লক্ষ্মীর এখন বিবাহ হইয়া গিয়াছে। কত দিন পরে লক্ষ্মী শ্বশুরালয় হইতে পিত্রালয়ে আসিয়াছে। লক্ষ্মী এখন সকলকে ভাল বাসিতে শিখিয়াছে, লক্ষ্মীকেও এখন সকলে ভালবাসে। লক্ষ্মীর আগেকার যত সমবয়সী সকলেই তাহাকে দেখিতে আসিয়াছে, কেবল কুসুম আসে নাই। কুসুম কোথায়? কুসুম বুঝি এখন আর এ পৃথিবীর মেয়ে নয়, সে স্বর্গে ফুটিতে গিয়াছে।
লক্ষ্মী বিকালে সেই ছেলেবেলার বাগানটিতে আসিল, বাগানের চারিদিকে বিষণ্ণমনে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল, বাগানে সেই পরিচিত বৃক্ষাবলী, সেই ঘাসের বন, সেই ফুলের শোভা; এ সমস্তই তাহাকে তাহার বাল্যক্রীড়া স্মরণ করাইয়া দিতে লাগিল। লক্ষ্মী আস্তে আস্তে সেই পুকুর ধারের কেয়াগাছটির কাছে আসিয়া দাঁড়াইল,—এইখানেই তাহার জীবনের প্রথম শিক্ষা। এই পুকুরধারে কত যত্ন করিয়া কুসুম তাহার আহত হস্তে জল দিয়া দিয়াছিল, কিরূপ প্রতিশোেধ দিয়া লক্ষ্মীকে সে ভাল করিয়াছে! এই সমস্ত মনে করিয়া অশ্রুজলে লক্ষ্মীর বুক ভাসিয়া গেল। লক্ষ্মী মনে মনে বলিল “কুসুম কোথায় তুমি! তোমাকে আর পৃথিবীতে দেখিতে পাইলাম না, তুমি এখন স্বর্গের দেবী; কিন্তু লক্ষ্মীর হৃদয়ে তুমি চিরকালই ফুটিয়া থাকিবে।”