পাতা:গল্পস্বল্প.djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ৪৮ )

 এই সকল ধনরত্ন দেখিয়া পরীর হৃদস্য আহ্লাদে স্ফীত হইয়া উঠিল। এত দুর্লভ, অপূর্ব্ব দ্রব্য থাকিতে ভাগ্য দেবী যে কাহাকেও সুখী করিতে পারেন না, ইহা তাহার অত্যন্ত আশ্চর্য্য বলিয়া মনে হইতে লাগিল। এই সকল ধন রত্ন দ্বারা পরী যে পৃথিবীর দুঃখ দূর করিতে সমর্থ হইবে তাহাতে আর তাহার সন্দেহ মাত্র রহিল না।

 আশাপূর্ণ হৃদয়ে সে পৃথিবীতে নামিয়া প্রথমেই একটি মাঠের ধারে একখানি ভগ্ন কুটীরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিল। দেখিল, কুটীরে একজন কৃষকপত্নী ক্ষুধিত সন্তানের দিকে চাহিয়া কাঁদিতেছে, আর চাষা নিকটেই ক্ষেত্রে কোদাল পাড়িতেছে। তাহার এমন সঙ্গতি নাই যে একখানি লাঙ্গলও কিনিয়া কার্য্যের একটু সুসার করে। তাদের দুঃখ দেখিয়া দয়ার্দ্র হৃদয়ে চাষার নিকটে আসিয়া পরী তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল—“তুমি কি চাও?”

 কৃষক তাহার নিকট কিঞ্চিৎ অর্থ প্রার্থনা করিল, প্রার্থনা পূর্ণ হইলে মহা সুখী হইয়া কুটীরে গমন করিল।

 পরী মনে মনে ভাবিল, “এইত ভাগ্য দেবী যাহা পারেন নাই, আমি তাহা পারিলাম, আমার দানে কৃষক কতদুর সুখী হইয়াছে। আচ্ছা ইহার যেন ধনের অভাব ছিল, কিন্তু যাহার ধনের অভাব নাই সে না জানি কিসের কাঙ্গাল!” পরী কৌতুহল পরবশ হইয়া একজন ধনীর গৃহে গিয়া দেখিল, ধনী মনে মনে মহা অসুখী। তাহার ধন আছে বটে কিন্তু মান নাই। পরী দয়ার্দ্র হইয়া তাহাকে মান দান করিল। মান পাইয়া তাহাকে সুখী হইতে দেখিয়া পরী তখন ভাবিতে লাগিল—“আচ্ছা একজন ধনের কাঙ্গাল একজন মানের কাঙ্গাল, এ দুইই যাহার আছে—তাহার কি দুঃখ?”