পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

a&O গল্প-গ্রন্থাবলী শিকারীর সঙ্গে যে দুইজন লোক ছিল, তাহদের একজন কোথায় অদশ্য হইয়াছে,— অপর জন আহতের শশ্রেষায় নিযুক্ত। তার পর ঝিকে বলিল, “কিশোরীর-মা, বাবা রোগীকে আনতে পারকী নিয়ে নিজে গেছেন। নীচের ঘরে যে লোহার খাটখানা আছে, তাতে গদি পাতাই আছে, গদিটার ধলো বেশ করে ঝেড়ে, তার উপর একখানা তোৰক আর একটা সাফ চাদর পেতে, বালিস-টালিস দিয়ে বিছানা পেতে রাখা গে—বাবা বলে গেছেন।” “ও মা, কি আপদ হ'ল! হে মা মধুসুদন "—বলিয়া ঝি প্রস্থান করিল। সুশোভন দেখিতে লাগিল। ঐ তাহার পিতার পাকী ছটিয়াছে। এক মিনিট, দুই মিনিট, প্রায় মাঝামাঝি গিয়া পৌছিল। হঠাৎ একটা কথা তাহার স্মরণ হইল। সে নীচে নামিয়া গেল। কিশোরীর-মা তোষক ও বিছানার চাদর অন্বেষণে-ব্যাপত । সংশোভনা জিজ্ঞাসা করিল, “কিশোরীর-মা, তুই চণে-হলদে তৈরি করতে জানিস?" “হ্যাঁ দিদিমণি, তা আর জানিনে ?” “তবে যা, তুই হলদে বেটে একটা এনামেলের বাটিতে চণে আর হলদে মিশিয়ে টোভ জেলে চড়িয়ে দিগে ষা, বিছানা-টিছানা আমিই সব ঠিক ক’রে রাখছি।” কিশোরীর-মা চলিয়া গেল। তোষক প্রভৃতি লইয়া সশোভনা শষ্যা প্রস্তুত করিয়া, আবার ছাদে গিয়া উঠিল। যন্ত্রে চক্ষলগ্ন করিয়া দেখিল, পাকী ফিরিতেছে—তাহার পিতা ও অপর ভদ্রলোকটি পদব্রজে আসিতেছেন। পালকণী দত আসিতেছে। তাই ত, রোগী আসিয়া পড়িবে, পিতা পশ্চাতে রহিলেন যে ! সুশোভনা আবার নামিয়া গেল। সরকারবাবকে ডাকিয়া তাঁহাকে সব কথা বুঝাইয়া বলিল। সরকারবাব ফটকের নিকট গিয়া বারবান ও মালীকে ডাকিয়া, রোগীকে নামাইয়া বিছানায় লইয়া যাওয়া সম্বন্ধে যথোপযুক্ত উপদেশ দিতে লাগিলেন। বামনঠাকুর ও রামকিষণ ভৃত্যও সাহায্য করবে। সশোভনা বারান্দায় উঠিয়া পথপানে চাহিয়া দড়িাইয়া রহিল। দেখিতে দেখিতে পালকী আসিয়া পেপছিল। পালকণী বারান্দার উপরে উঠানো হইল । সকলে মিলিয়া ধরাধরি করিয়া রোগীকে নামাইয়া শয্যায় তাহাকে শয়ন করাইয়া দিল । রোগী যন্ত্রণায় কাংরাইতে কাংরাইতে, একবার চক্ষ খলিয়া সশোভনার প্রতি চাহিল। বলিল, “টেলিগ্রাম করে কলকাতা থেকে ডাক্তার আনান—বড় যন্ত্রণা।” সুশোভনা বলিল, “তাই আনাচ্ছি। বাবা আসন । আপনার কোনখানে বেশী লেগেছে, বলন দেখি !" রোগী কাৎরাইতে কাৎরাইতে বাম পদে হাঁটর নিম্নস্থান দেখাইয়া বলিল, “বোধ হয়, ফ্ল্যাকচার হয়েছে।” অলপক্ষণ মধ্যেই হরিশতকরবাব রোগীর বন্ধ স্কুমারের সঙ্গে আসিয়া পৌছিলেন। চণে-হলদে প্রস্তুত জানিয়া তিনি জখমের পথানে উহা লাগাইয়া ফ্ল্যানেল জড়াইয়া বেশ করিয়া বধিয়া দিলেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রোগীর যন্ত্রণার লাঘব হইল, তাহার কাংরানি বন্ধ হইল, নিদ্রার আবেশ দেখা দিল । হরিশপ্তকরবাব বললেন, “সন্ধ্যার আগে কলকাতায় যাবার ট্রেণ ত নেই—তাতে অনেক সময় নষ্ট হধে যে ! বরঞ্চ অমরবাবর ফামের ম্যানেজার—কি নাম বললেন যে—তাঁকে টেলিগ্রাম করে দিন, তিনি মেডিকেল কলেজের কোন ভাল সাজ্ঞজনকে সঙ্গে নিয়ে আসনে । এখন বেলা দেড়টা-সন্ধ্যা নাগাদ তিনি ডাক্তার নিয়ে এসে পড়তে পারবেন।” তদনুসারে রোগীর অবস্থার সব কথা খালিয়া একখানি দীঘ টেলিগ্রাম প্রেরিত হইল। রোগী জাগিলে, মাঝে মাঝে তাহাকে গরম দধে পান করানো হইল। - বেলা পাঁচটার সময় তার আসিয়া পে’ছিল, ম্যানেজারবাব সাহেব ডাক্তারসহ সন্ধ্যা