পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O গঙ্গাপ-গ্রন্থাবলী সে দিন এই পৰ্য্যন্ত। তাহার পর কোনও দিন মা, কোনও দিন মাসী, কোনও দিন পিসী, কোনও দিন খাড়ি-জোঠী-ঠানদিদিরা এ বিষয়ে মহেন্দুকে অনুরোধ করিতে লাগিলেন। অবশেষে তাঁহাদের পীড়াপীড়িতে মহেন্দু উত্যক্ত হইয়া থানত্যাগ করাই স্থির করিল। একদিন মাকে বলিল, “মা, আমি ভেবে দেখলাম, এ রকম ভাবে ঘরে বসে থাকাটা ঠিক নয়। একটা কায-কম্মের উপায় না হ’লে সংসারই বা চলবে কি করে ? তাই মনে করছি, তুমি যদি মত কর তবে কলকাতায় গিয়ে একটা চাকরী-বাকরীর চেষ্টা দেখি।" এতদিনে ছেলের সাবধি হইয়াছে জানিয়া মাতা পালকিত হইয়া উঠিলেন। বলিলেন, “তাই ত করা উচিত বাবা! লেখাপডা শিখেছ, একটা চেষ্টা করলে অবশ্যই একটা ভাল কাষ-কলম জোটাতে পারবে। তা কলকাতাষ যাও—এস গিয়ে—তাতে আমার কোনও অমত নেই।”—মনে ভাবিলেন, কায-কম করিতে করতেই ছেলের মন ভাল হইবে,—আবার বিবাহ করিতে রাজী হইবে,–সংসারটা বজায় থাকিবে। সেই গ্রামের একজন কাযকথ কলিকাতায় লোহার ব্যবসায় করিয়া থাকেন। বড় কারবার। করিল। তিনি শনিবা রাজী হইলেন ; বলিলেন, “বেশ ত ! আমার সঙ্গেই তুমি চল বাবাজী। আমার গদীতে থাকবে –খাবে দাবে—আর কায-কমের চেষ্টা করে বেড়াবে। আমার আড়তেও অনেক লোক প্রতিপালিত হচ্ছে—কিন্তু তুমি ভাল লেখাপড়া শিখেছ, সে রকম সামান্য চাকরী ত তোমার উপযুক্ত হবে না, ভবিষ্যতেও তেমন কোনও উন্নতি নেই। কোনও একটা ভাল আপিস-টাপিসে ঢোকবার চেন্টাই দেখতে হবে তোমায়। কারবারসরে দু’চার জন বড়লোকের সঙ্গে আমার আলাপ পরিচয় আছে, আমিও তোমার জন্যে চেষ্টা দেখবো।” যথাদিনে মহেন্দু আমশাখাষন্তে ঘট প্রণাম করিয়া, জননী প্রভৃতির পদধলি লইল। মা, তাহার কপালে দধির ফোঁটা দিয়া, “চিরজীবী হও-রাজ-রাজেশবর হও”—বলিয়া আশীস্বাদ করিলেন। একটি ব্যাগে নিজ সামান্য বস্ত্রাদি, মতা পত্নীলিখিত খানকতক পরাতন চিঠি এবং মাতৃদত্ত দশটি মাত্র টাকা লইয়া, মহেন্দু কলিকাতা যাত্রা করিল। u ङिन ॥ মহেন্দু মফঃস্বলে প্রতিপালিত হইলেও, সে নেহাৎ পাড়াগে"য়ে নহে—কলিকাতা তাহার • নিতান্ত অপরিচিত ছিল না, পিতার জীবনকালে তাঁহার সহিত কযেকবার সে কলিকাতায় আসিয়া এক মাস দেড় মাস করিয়া থাকিয়া গিয়াছে। কলিকাতায় পৌছিবার দই দিন পরে সেই কায়স্থ বাবটি মহেন্দুকে সঙ্গে লইয়া বাহির হইলেন এবং কয়েক জন বড়লোকের নিকট তাহাকে পরিচিত করিয়া দিলেন। তাঁহারা বলিলেন, “চেন্টা করা যাবে। মাঝে মাঝে এসে খবর নিও।” মহেন্দ্র দুই চারি দিনু অন্তর তাঁহাদের বৈঠকখানায় গিয়া থপৰ্শ দিতে লাগিল; সব দিন যে কত্তা মহাশয়ের দেখা গাইত, তাহা নহে; দেখা পাইলেও, বিশেষ কোনও আশার বাক্য শনিতে পাইত না। "বি-এটা পাস করা থাকলে চট করে একটা কিছু হয়ে যেতে পারতো -যা হোক, চেষ্টায় আছি, দু’চার জন লোককে বলেও রেখেছি, দেখি কি হয়।”— এইরুপ কথা শুনিয়াই ফিরিতে হইত। আফিস অঞ্চলেও মহেন্দ্র ঘোরাঘুরি আরম্ভ করিল। সারাদিন ধলোয় রৌদ্রে ঘরিয়া, শ্রান্ত-ক্লান্ত হইয়া গদীতে ফিরিয়া আসিত। আহার করিয়া সকালে সকালে শয়ন করিতে যাইত; মতা পত্নীর মুখখানি ভাবিতে ভাবিতে ঘামাইয়া পড়িত। মিজান পাইলে ব্যাগ হইতে চঞ্চলার পত্রগুলি বাহির করিয়া পাঠ করিত; পড়া শেষ করিয়া, সজল নয়নে সেগুলি