পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

을 - গল্প-গ্রন্থাবলী রাখতে গাড়োয়ানও এই কথাই জানে।” - “বউমাকে তৈরী হতে বলগে।” বলিয়া অামি জামা গায়ে দিলাম। এই সময় বাহিরে ঠঠ-ঠং করিয়া বাইসিক্লের শব্দ হইল। কে আসিল ? উঠিয়া জানালায় দাঁড়াইয়া দেখিলাম, বাইসিক্ল হতে প্রফুল্ল দাঁড়াইয়া, গাড়োয়নের সহিত কি ! কথাবাত্ত কহিতেছে। তার পাশে, অপর বাইসিক্ল হতে তার সেই বন্ধমানের বন্ধ: ' সুরেন্দ্রনাথ। এক মিনিট পরে প্রফুল্ল ও সরেন আসিয়া প্রবেশ করিল। উভয়ের সব্বাঙ্গ ধলিধসরিত—দর-দর করিয়া ঘাম ঝরিতেছে। প্রফুল্ল আসিয়াই আমার পা জড়াইয়া বলিল, “বাবা আমায় মাফ করন।” & “কেন, কেন বাবা, হঠাৎ কি হয়েছে ?” “স্বশর-মশায় তাঁর মেয়েকে এখানে রেখেই বদ্ধমানে গিয়েছিলেন আমায় আনতে। গাড়োয়ানের কাছেও শুনলাম। বাবা, আপনি যখন জগন্ধাত্রী পজোর সময় বন্ধমানে আমায় দেখতে গিয়েছিলেন, তখন আমি কাররে বিয়ের নেমন্তৰে যাইনি, আমি গিয়েছিলাম শ্বশুরবাড়ী। আপনাদের লকিয়ে গিয়েছিলাম, সরেন সব কথাই জানতো, তাই আমায় বাঁচাবার জন্যে সে মিথ্যে করে ঐ সব কথা আপনাকে বলেছিল।" সরেন ছোকরা নত মস্তকে দাঁড়াইয়া। শুনিয়া আমার বাক হইতে হাজার মণ পাথরের ভার নামিয়া গেল। আমি নিঃশ্বাস ছাড়িয়া, যুগ্মকর ললাটে পশ করিয়া, উদ্দেশে নারায়ণ প্রণাম করিলাম। প্রফুল্লর প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে, তাহার গভধারিণীও আসিয়া দয়ারের কাছে দাঁড়াইয়াছিলেন। সমস্ত শনিয়া চোখে অঞ্চল দিয়া তিনি চলিয়া গেলেন,—বোধ হয় বউমার কাছে। কিয়ৎক্ষণ পরেই গহিণী ফিরিয়া আসিয়া প্রফুল্ল ও সরেনকে নানাহার করাইতে লইয়া গেলেন। অপরাহুে স্বয়ং বেহাই-মশাই গোষানে আসিয়া উপসিথত—কামারহাটী হইতে নয়, বন্ধমান হইতে, প্রফুল্ল ও সরেন্দ্রের সহিত এক ট্রেণে আসিয়াছিলেন। * ক্লমে ক্ৰমে সকল কথা শুনিলাম। বন্ধমান হইতে কামারহাটি যাইতে হইলে, পাণ্ডয়া টেশনে নামিয়া তিন ক্লোশ । কিন্তু বন্ধমান হইতে কামারহাটি অবধি পাকা সড়ক আছে, উহা সাত ক্লোশ ব্যবধান। প্রফুল্ল সাত ক্লোশ পথ বাইসিক্লে অতিবাহন করিয়া, শুধ সেই জগদ্ধাত্রী-পজার ছয়টিতে যে শ্বশুরবাড়ীতে গিয়াছিল তাহা নয়, প্রতি শনিবারে শ্বশুরবাড়ী যাইত এবং সোমবার ভোরে সেখান হইতে রওয়ানা হইয়া, বাসায় আসিয়া সনানাহার করিয়া কলেজ করত । তার বশর জানিতেন যে জামাই লুকাইয়া যাওয়া-আসা করে। সবভাবতঃ তিনি জামাইয়ের গোপন কথা ব্যক্ত করিতে চাহেন নাই। মাঝে মাঝে চিঠি লিখিতেন, কোন চিঠিতেই কোনও দিন লেখেন নাই যে, প্রফুল্ল বাবাজীবন আসিয়াছিলেন তিনি ভাল আছেন, বন্ধমানে ফিরিয়া গিয়াছেন। কথা তিনি প্রকাশ করবেন না বাশুড়ীর কাছে এই আশবাস পাইয়াই প্রফুল্লর যাতায়াত তখন ঘন-ঘন হইয়া উঠিয়াছিল। শধে তাই নয়। শুনিলাম, পাজীটা নাকি বউমাকেও, নিজের পায়ে হাত দেওয়াইয়া শপথ করাইরা লইয়াছিল যে, ঘর-বসত করিতে আসিয়া সে কথা তিনিও যেন এখানে প্রকাশ না করেন। আমাদের কালে যে সব ব্যাপার একেবারেই অসম্ভব বলিয়া গণ্য ছিল, একালের ছেলেদের পক্ষে তাহ আর নাই, আমরা সন্ত্রী-পরে যে এই আলোচনা করিয়া গোপনে অনেক হাসাহাসি করিলাম। י - আষাঢ় মাসে প্রফুল্লর পরীক্ষার ফল বাহির হইল। জলপানি ত পায়ই নাই, পাস হইয়াছে মাত্র, তাও থাড ডিভিজনে। - *...