পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8O8 গল্প-গ্রন্থাবলী কত আদর করিলেন। আমি ঘুমাইয়া পড়িলাম। অনেক রাত্রে আমার ঘমে ভাঙ্গিয়া গেলে দেখিলাম, আমার মা ও পরাতন বাবা, ঘরের মাঝখানে দাঁড়াইয়া আছে, আমার নাতন বাবা যে সেদিন আসিয়াছিল, তার গলা কাটা, রক্তে বিছানা ভাসিয়া যাইতেছে। দেখিয়া আমি কাঁদিয়া উঠিলাম। বাবা আমায় ধমক দিয়া বলিল, “চুপ কর পাজি! চোঁচাবি ত তোরও গলা এমনি করে কেটে দেবো।” ভয়ে আমি চক্ষা মদিলাম এবং ঘুমাইয়া পড়িলাম।” ' গ্রামের একজন ডোম এ মোক দমায় একটা প্রধান সাক্ষী ছিল, তাহার উক্তি হইতে প্রকাশ– খনের পর মাতঙ্গিনী তাহাব জীবকে বলিতে লাগিল “চল, এবার দুজনে লাসটা নদীতে দিয়ে আসি।” সে ব্যক্তি বলিল, “দাঁড়াও, একটা সিথর হয়ে নিই। রক্ত দেখে আমার মাথাটা কেমন ঘরছে। ভয় কি ? একটা সবর কর—সব ঠিক করে দিচ্ছি।" কিছুক্ষণের পর সে ব্যক্তি বলিল, “একবার চট করে বাইরে থেকে আসি”—বলিয়া সে বাহির হইয়া, রাত্রির অন্ধকারে কে পায় গেল, পলিস তাহার কোনও সন্ধান করিতে পারে নাই । মাতঙ্গিনী বসিযা তাহার জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিল। দশ মিনিট-পনেরো মিনিট আধ ঘণ্টা হইয়া গেল, তখন সে বুঝিতে পারিল, তাহার পেয়ারের লোকটি—এই অবস্থায তাহাকে ফেলিয়া--পলায়ন করিয়াছে। মাতঙ্গিনী তখন বাড়ীতে তালা বন্ধ করিয়া, সেই অন্ধকারে বাহির হইল। গ্রামের ডোমপাড়ায় গিয়া, তাহার বিশ্বসত একজন ডোমকে জাগাইল । তাহার নিকট আমলে সমস্ত মটনা প্রকাশ করিয়া বলিল, “তুমি আমাব বাবা, তুমি আমার প্রাণ বাঁচাও। এখন মাত্র দপব রাত, রাতারাতি লাসটা নদীতে দাও । তোমার পরস্কার, আমার হাতের এই •",তন বালাযোড়াটা। একটা তোমায় আমি এখনি দিয়ে যাচ্চি— আগাম। আর একটা, কাজ শেষ হয়ে গেলেই তুমি পাবে।”—বলিয়া মাতঙ্গিনী এক হাতের বালা খলিয়া ডোমকে फ्रळ ॥ সমস্ত শনিয়া বালা লইয়া ডোম বলিল, “আচ্ছা মাঠাকরণ, যা করবার আমি সব বেছি। তামাকটা খেয়ে নিই, খেয়ে, আমার এক বন্ধ ডোমকেও ডাকি। তাকেও সঙ্গে নেওয়া দরকার, একলা ত আমি পারবো না। অন্য বালাটা বরঞ্চ তাকেই দেবেন, সেও ত পরস্কারের আশা করবে। আপনি বাড়ী যান, আমি আধ ঘণ্টার ভিতরই তাকে নিয়ে আসছি।” মাতঙ্গিনী বাড়ী চলিয়া গেল। ডোম, তামাক শেষ করিয়া, অন্য কোনও ডোমখে জাগাইতে গেল না—সে গেল থানায়। দারোগাকে জাগাইয়া মাতঙ্গিনী যাহা যাহা তাহাকে বলিয়াছিল, সমস্তই দারোগাকে জানাইল, এবং বালাটিও দারোগাকে দিল । দারোগা সেই রাত্রেই গিয়া মাতঙ্গিনীকে গ্রেপ্তার করিলেন। অবশেষে, সেসন জজের আদালতে মাতঙ্গিনীর বিচার হইল। কে যে হত্যা করিয়াছিল—মাতঙ্গিনীই গলা কাটিয়াছিল, অথবা তাহার জারই ও-কাৰ্য্য করিয়াছিল,—তাহা নিণীত হইল না। চাক্ষষে সাক্ষী কেবলমাত্র সেই পাঁচ বৎসরের বালক। কিন্তু আইন এই যে, যদি দই বা তদধিক ব্যক্তি একমত হইয়া কোনও দকোষ" করে, তবে প্রত্যেকেই সমভাবে অপরাধী ( পীনাল কোড, ৩৪ ধারা )। স্বেচ্ছাকৃত নরহত্যার ধারাতেই জজ মাতঙ্গিনীকে অপরাধী সাব্যস্ত করিলেন, কিন্তু সীলোক বলিয়া দয়া করিয়া চরম-দণ্ড ( ফাঁস ) না দিয়া যাবতজীবন দ্বীপান্তরের আদেশ দিলেন। জজ আদালত হইতে মাতঙ্গিনীকে কয়েদী গাড়ীতে (prisoa van) যখন জেলে