পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হারাধন মাথায় বড় বড় ঝাঁকড়া-ঝাঁকড়া চল, বহুকেল তাহাতে তৈলঙ্গপশ ঘটে নাই, কৃষ্ণবর্ণ কৃশ দেহ, কোটরগত চক্ষ, অত্যন্ত ছিন্ন মলিনবেশী এক প্রৌঢ় ব্যক্তি সিরাজগঞ্জ বাজারে রামলোচন সরকারের চাউলের আড়তে আসিয়া বলিল, “বব মশায়, আজ সারাদিন আমি কিছ খেতে পাইনি।” : রামলোচন তহবিল মিলাইবার জন্য সন্মখে রাশিক্ত টাকা পয়সা, সিকি, দয়ানি প্রভৃতি লইয়া গণিয়া গণিয়া থাকে থাকে সাজাইয়। রাখিতেছিলেন। ভিধুরীর প্রতি চোখের কোণে একবার দটিমাত্র করিয়া, একটা পয়সা তাহ র দিকে ঠক করিয়া ফেলিয়া দিলেন। পয়সাটি কুড়াইয়া লোকটা ট্যাঁকে গজিয়া করণস্বরে বলিল, “একটা পয়সায় কি হবে বাব ? मात्रामिन किष्ट थाइँन।” এইবার রামলোচন ভাল করিয়া লোকটার মুখের পানে চাহিলেন। চেহারা দেখিয়া তাঁহার মনে বোধ হয় একটু দয়ার সঞ্চার হইল ; বলিলেন, “ভাত খাবে?" লোকটা বলিল, “আজ্ঞে, তাই যদি দটি আজ্ঞে হয়।” “আচ্ছা বোস তা হলো। সন্ধোটা দেখিয়েই দোকান বন্ধ করবো। বাসায় নিয়ে গিয়ে তোমায় ভাত খাওয়াব : ঐ যে পয়সাটা দিলাম, ময়রার দোকানে গিয়ে কিছল মিষ্টি বিনে ততক্ষণ জল খাওগে।"-—বলিয়া তিনি তহবিল মিলাইতে মন দিলেন । রামলোচন সরকার জাতিতে কায়সখ। তাঁহার নিবাস এ স্থানে নহে, তবে এই জিলাতেই বটে। বাজারে এই চাউলের আড়তটি তাঁহাব পৈতৃক আমলের ; বাজার হইতে কিছ দরে নদীর সন্নিকটে দ্বিতল বাসবাটীখানিও তাঁহার পিতা নিম",ণ করাইয়াছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর রামলোচন ও তাঁহার কনিষ্ঠ পদ্মলোচন উভয় ভ্রাতার মিলিয়া কারবার চলাইতেন। পিতার জীবিতকালেই উভয়ের বিবাহ হইয়াছিল, বড়বধর নাম তারাসন্দেরী, ছোটর নাম রাধারাণী। বাড়ীতে বিধবা মাতা ছিলেন, তাঁহার সেবা ও ঘর গহন্থালী কমের জন্য উভয় বধ এককালে এখানকার বসাবাটীতে আসিয়া থাকিতে পারিতেন না— পালাক্রমে ছয় মাস করিয়া এক জন বাটীতে থাকিতেন, এক জন বামাবাটীতে আসিয়া স্বাধীন গহিণীপনার সখাসবাদন করিতেন। পাঁচ ছয় বৎসর এই বন্দোবস্তই চলিয়া আসিতেছিল ; এক দিন হঠাৎ কলেরা রোগে পদ্মলোচনের মৃত্যু হইল। ইহার পর বিধবা জননীও অধিক দিন জীবিত ছিলেন না, মাস ছয়েক পরেই তাঁহার পল্লশোক, চিতার আগনে নিৰ্বাপিত হইল। সেই অবধি তারাসুন্দরীই সিরাজগঞ্জের বাসাবাটীতে কায়েম হইলেন, রাধারাণী তাঁহার শ্বশুরের ভিটা আগলাইয়া পড়িয়া রহিলেন। বড়বধও অবশ্য মাঝে মাঝে গিয়া থাকেন ; কিন্তু অধিকাঁদন থাকিতে পারেন না, বাসাবাটীতে কত্তাকে, অতিথি-অভ্যাগতকে ভাত জল দেয় কে ? সম্প্রতি দিন পনেরো হইল, ছোট-বধ বাসীবাটীতে আসিয়া রহিয়াছেন, কারণ ত রাসন্দেরী এখন সন্তানসভাবিতা—দিনও ঘনাইয়া আসিয়াছে। u HÄR u তহবিল মিলানো শেষ করিয়া, টাকাগুলি বাসায় লইয়া যাইবার জন্য খেরয়ার থলিতে ভরিয়া রাখিয়া সন্ধ্যার প্রাক্কালে রামলোচন থেলো হকা হাতে করিয়া তামাকু সেবন করিতেছিলেন, এমন সময় পাবকথিত সেই ভিখারী আসিয়া দোকানে প্রবেশ করিল। রামলোচন বলিলেন, “কি হে, জগটল কিছ খেলে ?” ○/>