পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০৮
গল্প-দশক।

সে তাহার স্বামীর মোহাবস্থা না জানিয়াও মনে মনে অসূয়া অনুভব করিত। আর কোন নারীর এমন কোন মনোরঞ্জনী বিদ্যা আছে যাহা তাহার নাই ইহা সে সহ্য করিতে পারিত না। সাসূয় কৌতূহলে সে অনেকবার থিয়েটার দেখিতে যাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিত, কিন্তু কিছুতেই স্বামীর মত করিতে পারিত না।

 অবশেষে সে একদিন টাকা দিয়া সুধোকে থিয়েটার দেখিতে পাঠাইয়া দিল;—সুধো আসিয়া নাসাভ্রূ কুঞ্চিত করিয়া রামনাম উচ্চারণ পূর্ব্বক অভিনেত্রীদিগের ললাটদেশে সম্মার্জ্জনীর ব্যবস্থা করিল—এবং তাহাদের কদর্য্যমূর্ত্তি ও কৃত্রিম ভঙ্গীতে যে সমস্ত পুরুষের অভিরুচি জন্মে তাহাদের সম্বন্ধেও সেই একই রূপ বিধান স্থির করিল। শুনিয়া গিরিবালা বিশেষ আশ্বস্ত হইল।

 কিন্তু যখন তাহার স্বামী বন্ধন ছিন্ন করিয়া গেল, তখন তাহার মনে সংশয় উপস্থিত হইল। সুধোর কথায় অবিশ্বাস প্রকাশ করিলে সুধো গিরির গা ছুঁইয়া বারম্বার কহিল, বস্ত্র খণ্ডাবৃত দগ্ধকাষ্ঠের মত তাহার নীরস এবং কুৎসিত চেহারা। গিরি তাহার আকর্ষণীশক্তির কোন কারণ নির্ণয় করিতে পারিল না, এবং নিজের অভিমানে সাংঘাতিক আঘাত প্রাপ্ত হইয়া জ্বলিতে লাগিল।

 অবশেষে একদিন সন্ধ্যাবেলায় সুধোকে লইয়া গোপনে থিয়েটার দেখিতে গেল। নিষিদ্ধ কাজের উত্তেজনা বেশী।