পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ঠাকুর্দ্দা।
১২৩

সিন্দুকের মধ্যে পৈতৃক কোম্পানির কাগজ আমার নিকট অনেক বেশী মূল্যবান বলিয়া মনে হয়।

 বোধ করি সেই কারণেই, কৈলাসবাবু তাঁহাদের পূর্ব্বগৌরবের ফেল্‌-করা ব্যাঙ্কের উপর যখন দেদার লম্বাচৌড়া চেক্ চালাইতেন তখন তাহা আমার এত অসহ্য ঠেকিত। আমার মনে হইত, আমার পিতা স্বহস্তে অর্থ উপার্জ্জন করিয়াছেন বলিয়া কৈলাসবাবু বুঝি মনে মনে আমাদের প্রতি অবজ্ঞা অনুভব করিতেছেন। আমি রাগ করিতাম এবং ভাবিতাম অবজ্ঞার যোগ্য কে? যে লোক সমস্ত জীবন কঠোর ত্যাগস্বীকার করিয়া, নানা প্রলোভন অতিক্রম করিয়া, লোকমুখের তুচ্ছ খ্যাতি অবহেলা করিয়া, অশ্রান্ত এবং সতর্ক বুদ্ধিকৌশলে সমস্ত প্রতিকূল বাধা প্রতিহত করিয়া সমস্ত অনুকূল অবসরগুলিকে আপনার আয়ত্তগত করিয়া একটি একটি রৌপ্যের স্তরে সম্পদের একটি সমুচ্চ পিরামি্ড্‌ একাকী স্বহস্তে নির্মাণ করিয়া গিয়াছেন, তিনি হাঁটুর নীচে কাপড় পরিতেন না বলিয়া যে কম লোক ছিলেন তাহা নয়!

 তখন বয়স অল্প ছিল সেই জন্য এইরূপ তর্ক করিতাম রাগ করিতাম—এখন বয়স বেশী হইয়াছে এখন মনে করি, ক্ষতি কি! আমার ত বিপুল বিষয় আছে, আমার কিসের অভাব? যাহার কিছু নাই, সে যদি অহঙ্কার করিয়া সুখী হয়, তাহাতে আমার ত শিকি পয়সার লোকসান নাই, বরং সে বেচারার সান্ত্বনা আছে।