পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ঠাকুর্দ্দা।
১৩৫

 অবশেষে কিছুতে আর থাকিতে না পারিয়া ছুটিয়া কিঞ্চিৎদূরবর্ত্তী এক ঘরের মধ্যে গিয়া প্রকাশ করিলাম—এবং সেখানে হাসির উচ্ছ্বাস উন্মুক্ত করিয়া দিয়া হঠাৎ দেখি, একটি বালিকা তক্তপোষের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাঁদিতেছে।

 আমাকে হঠাৎ ঘরে প্রবেশ করিয়া হাসিতে দেখিয়া সে তৎক্ষণাৎ তক্তা ছাড়িয়া দাঁড়াইল—এবং অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে রোষের গর্জ্জন আনিয়া আমার মুখের উপর সজল বিপুল কৃষ্ণচক্ষের সুতীক্ষ্ণ বিদ্যুৎ বর্ষণ করিয়া কহিল—“আমার দাদামশায় তোমাদের কি করেছেন—কেন তোমরা তাঁকে ঠকাতে এসেচ—কেন এসেচ তোমরা”—অবশেষে আর কোন কথা জুটিল না—বাক্‌রুদ্ধ হইয়া মুখে কাপড় দিয়া কঁদিয়া উঠিল।

 কোথায় গেল আমার হাস্যাবেগ! আমি যে কাজটি করিয়াছি তাহার মধ্যে কৌতুক ছাড়া আর যে কিছু ছিল এতক্ষণ তাহা আমার মাথায় আসে নাই—হঠাৎ দেখিলাম অত্যন্ত কোমল স্থানে অত্যন্ত কঠিন আঘাত করিয়াছি; হঠাৎ আমার কৃত কার্য্যের বীভৎস নিষ্ঠুরতা আমার সম্মুখে দেদীপ্যমান হইয়া উঠিল—লজ্জায় এবং অনুতাপে পদাহত কুক্কুরের ন্যায় ঘর হইতে নিঃশব্দে বাহির হইয়া গেলাম। বৃদ্ধ আমার কাছে কি দোষ করিয়াছিল? তাহার নিরীহ অহঙ্কার ত কখন কোন প্রাণীকে আঘাত করে নাই। আমার অহঙ্কার কেন এমন হিংস্রমুর্ত্তি ধারণ করিল?