পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রায়শ্চিত্ত।

আঘাত দেওয়া হইয়াছে। রাজকুমার বাবু ব্যথিতচিত্তে তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মা, আমাদের কোন অজ্ঞানকৃত আচরণে তোমার মনে কি ব্যথা লাগিয়াছে?

 বিন্ধ্যবাসিনী তাহার পিতার মুখের দিকে করুণ দৃষ্টিক্ষেপ করিয়া কহিল, এক মুহূর্ত্তের জন্যও নহে। তোমাদের এখানে বড় সুখে বড় আদরে আমার দিন গিয়াছে!—বলিয়া সে কাঁদিতে লাগিল! কিন্তু তাহার সংকল্প অটল রহিল।

 বাপ মা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মনে মনে কহিলেন, যত স্নেহে যত আদরেই মানুষ কর, বিবাহ দিলেই মেয়ে পর হইয়া যায়।

 অবশেষে অশ্রুনেত্রে সকলের নিকট বিদায় লইয়া আপন আজন্মকালের স্নেহমণ্ডিত পিতৃগৃহ এবং পরিজন ও সঙ্গিনীগণকে ছাড়িয়া বিন্ধাবাসিনী পাল্কীতে আরোহণ করিল।


দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ


কলিকাতার ধনিগৃহে এবং পল্লিগ্রামের গৃহস্থঘরে বিস্তর প্রভেদ। কিন্তু বিন্ধ্যবাসিনী একদিনের জন্যও ভাবে অথবা আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করিল না। প্রফুল্লচিত্তে গৃহকার্য্যে শ্বাশুড়ির সহায়তা করিতে লাগিল। তাহাদের দরিদ্র অবস্থা জানিয়া পিতা নিজবায়ে কন্যার সহিত একটি দাসী পাঠাইয়াছিলেন। বিন্ধ্যবাসিনী স্বামিগৃহে পৌঁছিয়াই তাহাকে বিদায়