রস আকর্ষণ করিয়া লইয়াছিল তেমনি পিতামহের চিত্তসঞ্চিত অনেকগুলি ভাব সে অলক্ষ্যে গ্রহণ করিয়াছিল। মুকুন্দলালের পরিবারের প্রতি গৌরীকান্তের যে একটি অচল নিষ্ঠা ও ভক্তি ছিল ইন্দ্রাণী যদিও তাহা সম্পূর্ণ প্রাপ্ত হয় নাই, কিন্তু প্রভুপরিবারের হিতসাধনে জীবন অর্পণ করা যে তাহাদের কর্ত্তব্য, এই ভাবটি তাহার মনে দৃঢ়বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছিল। তাহার সুশিক্ষিত স্বামী ইচ্ছা করিলে ওকালতী করিতে পারিতেন, সম্মানজনক কাজ লইতে পারিতেন, কিন্তু তাঁহার স্ত্রীর হৃদয়ের দৃঢ় সংস্কার অনুসরণ করিয়া তিনি অনন্যমনে সন্তুষ্ট চিত্তে বিনোদের বিষয়সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করিতেছিলেন। ইন্দ্রাণী যদিও অপমানে আহত হইয়াছিল, তথাপি তাহার স্বামী যে বিনোদলালের কাজ ছাড়িয়া দিবে এ তাহার কিছুতেই মনে লইল না।
ইন্দ্রাণী তখন যুক্তির অবতারণা করিয়া মৃদু মিষ্ট স্বরে কহিল—বিনোদ বাবুর ত কোন দোষ নেই তিনি এর কিছুই জানেন না—তাঁর স্ত্রীর উপর রাগ করে তুমি হঠাৎ তাড়াতাড়ি তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করতে যাবে কেন?
শুনিয়া অম্বিকা বাবু উচ্চৈঃস্বরে হাসিয়া উঠিলেন—নিজের সংকল্প তাঁহার নিকট অত্যন্ত হাস্যকর বলিয়া বোধ হইল। তিনি কহিলেন, “সে একটা কথা বটে! কিন্তু মনিব হোন আর যিনিই হোন্ ওদের ওখানে আর কখন তোমাকে পাঠাচ্চিনে।”