পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
গল্প-দশক।

করিয়া দিল। তাহার শ্বশুর-ঘরের দারিদ্র্য দেখিয়া বড়মানুষের ঘরের দাসী প্রতিমুহূর্ত্তে মনে মনে নাসাগ্র আকুঞ্চিত করিতে থাকিবে, এ আশঙ্কাও তাহার অসহ্য বোধ হইল।

 শ্বাশুড়ি স্নেহবশতঃ বিন্ধ্যকে শ্রমসাধ্য কার্য্য হইতে বিরত করিতে চেষ্টা করিতেন, কিন্তু বিন্ধ্য নিরলস অশ্রান্তভাবে প্রসন্নমুখে সকল কার্য্যে যোগ দিয়া শ্বাশুড়ির হৃদয় অধিকার করিয়া লইল এবং পল্লীরমণীগণ তাহার গুণে মুগ্ধ হইয়া গেল।

 কিন্তু ইহার ফল সম্পূর্ণ সন্তোষজনক হইল না। কারণ, বিশ্বনিয়ম নীতিবোধ প্রথমভাগের ন্যায় সাধুভাষায় রচিত সরল উপদেশাবলী নহে! নিষ্ঠুর বিদ্রূপপ্রিয় সয়তান মাঝখানে আসিয়া সমস্ত নীতিসূত্রগুলিকে ঘাঁটিয়া জট পাকাইয়া দিয়াছে। তাই ভাল কাজে সকল সময়ে উপস্থিতমত বিশুদ্ধ ভাল ফল ঘটে না, হঠাৎ একটা গোল বাধিয়া ওঠে।

 অনাথবন্ধুর দুইটি ছোট এবং একটি বড় ভাই ছিল। বড় ভাই বিদেশে চাকরি করিয়া যে গুটিপঞ্চাশেক টাকা উপার্জ্জন করিতেন, তাহাতেই তাহাদের সংসার চলিত এবং ছোট দুটি ভাইয়ের বিদ্যাশিক্ষা হইত।

 বলা বাহুল্য, আজকালকার দিনে মাসিক পঞ্চাশ টাকায় সংসারের শ্রীবৃদ্ধিসাধন অসম্ভব, কিন্তু বড় ভাইয়ের স্ত্রী শ্যামাশঙ্করীর গরিমাবৃদ্ধির পক্ষে উহাই যথেষ্ট ছিল। স্বামী সম্বৎসর কাল কাজ করিতেন, এই জন্য স্ত্রী সম্বৎসরকাল বিশ্রামের অধিকার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। কাজকর্ম্ম কিছুই করিতেন না,