পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রতিহিংসা।
১৫৩

পাঠাইয়া পশ্চিম প্রদেশের বনগুলি বন্দোবস্ত করিয়া হরীতকীর ব্যবসায় একচেটে করিবার আয়োজন হইত। বিনোদ মনে মনে ইহা বুঝিতেন যে, অন্য লোকে শুনিলে হাসিবে, সেই জন্য কাহারও কাছে প্রকাশ করিতে চাহিতেন না। বিশেষতঃ অম্বিকাচরণকে তিনি একটু বিশেষ লজ্জা করিতেন; অধিকা পাছে মনে করেন তিনি টাকাগুলো নষ্ট করিতে বসিয়াছেন সেজন্য মনে মনে সঙ্কুচিত ছিলেন। অম্বিকার নিকট তিনি এমনভাবে থাকিতেন যেন অম্বিকাই জমিদার এবং তিনি কেবল বসিয়া থাকিবার জন্য বার্ষিক কত টাকা করিয়া বেতন পাইতেন।

 নিমন্ত্রণের পরদিন হইতে নয়নতারা তাঁহার স্বামীর কানে মন্ত্র দিতে লাগিলেন। তুমি ত নিজে কিছুই দেখ না, তোমাকে অম্বিকা হাত তুলিয়া যাহা দেয় তাহাই তুমি শিরোধার্য্য করিয়া লও; এদিকে ভিতরে ভিতরে কি সর্ব্বনাশ হইতেছে তাহা কেহই জানে না। তোমার ম্যানেজারের স্ত্রী যা গয়না পরিয়া আসিয়াছিল, এমন গয়না তোমার ঘরে আসিয়া আমি কখনো চক্ষেও দেখি নাই। এ সব গয়না সে পায়, কোথা হইতে এবং এত দেমাকই বা তাহার বাড়িল কিসের জোরে! ইত্যাদি ইত্যাদি। গহনার বর্ণনা নয়নতারা অনেকটা অতিরঞ্জিত করিয়া বলিল, এবং ইন্দ্রাণী নিজ মুখে তাহার দাসীকে কি সকল কথা বলিয়া গেছে তাহাও সে বহুল পরিমাণে রচনা করিয়া গেল।