পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭৬
গল্প-দশক।

আহ্বানরূপিণীর অনুসরণ করিয়া আমি যে কোথায় যাইতে ছিলাম আজ তাহা স্পষ্ট করিয়া বলিতে পারি না। কত সঙ্কীর্ণ অন্ধকার পথ, কত দীর্ঘ বারান্দা, কত গম্ভীর নিস্তব্ধ সুবৃহৎ সভাগৃহ, কত রুদ্ধবায়ু ক্ষুদ্র গোপন কক্ষ পার হইয়া যাইতে লাগিলাম তাহার ঠিকানা নাই।

 আমার অদৃশ্য দূতীটিকে যদিও চক্ষে দেখিতে পাই নাই, তথাপি তাহার মূর্ত্তি আমার মনের অগোচর ছিল না। আরব রমণী, ঝোলা আস্তিনের ভিতর দিয়া শ্বেতপ্রস্তররচিতবৎ কঠিন নিটোল হস্ত দেখা যাইতেছে, টুপির প্রান্ত হইতে মুখের উপরে একটি সূক্ষ্ম বসনের আবরণ পড়িয়াছে, কটিবন্ধে একটি বাঁকা ছুরি বাঁধা।

 আমার মনে হইল, আরব্য উপন্যাসের একাধিক সহস্র রজনীর একটি রজনী আজ উপন্যাসলোক হইতে উড়িয়া আসিয়াছে। আমি যেন অন্ধকার নিশীথে সুপ্তিমগ্ন বোগ্‌দাদের নির্ব্বাপিতদীপ সঙ্কীর্ণ পথে কোন এক সঙ্কটশঙ্কিল অভিসারে যাত্রা করিয়াছি।

 অবশেষে আমার দূতী একটি ঘননীল পর্দ্দার সম্মুখে সহসা থম্‌কিয়া দাঁড়াইয়া যেন নিম্নে অঙ্গুলী নির্দ্দেশ করিয়া দেখাইল। নিম্নে কিছুই ছিল না, কিন্তু ভয়ে আমার বক্ষের রক্ত স্তম্ভিত হইয়া গেল। আমি অনুভব করিলাম, সেই পর্দ্দার সম্মুখে ভূমিতলে কিংখাবের সাজপরা একটি ভীষণ কাফ্রী খোজা কোলের উপর খোলা তলোয়ার লইয়া দুই পা ছড়াইয়া দিয়া