পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭৮
গল্প-দশক।

জনশূন্য পথে “তফাৎ যাও” “তফাৎ যাও” করিয়া চীৎকার করিতে করিতে চলিয়াছে।

 এইরূপে আমার আরব্য উপন্যাসের একরাত্রি অকস্মাৎ শেষ হইল—কিন্তু এখনো এক সহস্র রজনী বাকি আছে।

 আমার দিনের সহিত রাত্রের ভারি একটা বিরোধ বাধিয়া গেল। দিনের বেলায় শ্রান্ত ক্লান্তদেহে কর্ম্ম করিতে যাইতাম, এবং শূন্যস্বপ্নময়ী মোহময়ী মায়াবিনী রাত্রিকে অভিসম্পাত করিতে থাকিতাম-আবার সন্ধ্যার পরে আমার দিনের বেলাকার কর্ম্মবদ্ধ অস্তিত্বকে অত্যন্ত তুচ্ছ, মিথ্যা এবং হাস্যকর বলিয়া বোধ হইত।

 সন্ধ্যার পরে আমি একটা নেশার জালের মধ্যে বিহ্বলভাবে জড়াইয়া পড়িতাম। শত শত বৎসর পূর্ব্বে কোন এক অলিখিত ইতিহাসের অন্তর্গত আর একটা অপূর্ব্ব ব্যক্তি হইয়া উঠিতাম, তখন আর বিলাতী খাটো কোর্ত্তা, এবং আঁট প্যাণ্ট্‌লুনে আমাকে মানাইত না। তখন আমি মাথায় এক লাল মখ্‌মলের ফেজ্‌ তুলিয়া, ঢিলা পায়জামা, ফুলকাটা কাবা এবং রেশমের দীর্ঘ চোগা পরিয়া রঙীন্ রুমালে আতর মাখিয়া বহুযত্নে সাজ করিতাম এবং সিগারেট্‌ ফেলিয়া দিয়া গোলাপজলপূর্ণ বহুকুণ্ডলায়িত্ব বৃহৎ আল্‌বোলা লইয়া এক উচ্চগদিবিশিষ্ট বড় কেদারায় বসিতাম। যেন রাত্রে কোন এক অপূর্ব্ব প্রিয়সম্মিলনের জন্য পরমাগ্রহে প্রস্তুত হইয়া থাকিতাম।

 তাহার পর অন্ধকার যতই ঘনীত হইত ততই কি যে