পাতা:গিরিশ-গ্রন্থাবলী (অষ্টম ভাগ).pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সম্পাদক { এই প্রবন্ধট প্রথমে ‘রঙ্গালয় সাপ্তাহিক পত্রে (২৭ বৈশাখ, ১৩০৮ সাল ) প্রথম প্রকাশিত হয়। তৎপরে ‘নাট্যমন্দির’ মাসিক পত্রিকায় (১ম বর্ষ, অগ্রহায়ণ, ১৩১৭ সাল) পুনমুদ্রিত হয় ] পণ্ডিতেরা সংসারে যে কাৰ্য্য যে পরিমাণে কঠিন বিবেচনা করেন, সেই কাৰ্য্য সেই পরিমাণে সাধারণের ধারণা, যে, তাহারা বিশেষ অবগত। সাধারণ অর্থে আমরা বলিতেছি যে, সকল দেশের লোকেরই এইরূপ ধারণা ; সেই ধারণ আবার বাঙ্গালা দেশে ভীষণরূপে বলবতী । বাঙ্গালা দেশে প্রায় এমন লোক পাওয়া যায় না যে, ধৰ্ম্মের জটিল বিষয় লইয়া তর্ক-বিতর্ক না করিয়৷ থাকেন। রোগ সম্বন্ধে, ঔষধ সম্বন্ধে—আমাদের বন্ধুর মধ্যে অন্ততঃ এক শত জনের ভিতর নিরানব্বই জন উপদেশদাতা। বাড়ীতে ত সমূহ বিপদ, পরামর্শদাতা দ্বারা সে বিপদ শত গুণে বৰ্দ্ধিত হইয়া উঠে। এ ডাক্তার ডাকুন, ঐ কবিরাজ ডাকুন, অমুক ঔষধ ব্যবহার করুন, এ চিকিৎসা ভাল হইতেছে না, যিনি চিকিৎসা করিতেছেন — তিনি রোগই বুঝিতেছেন না। এইরূপ পরামর্শে বিপন্ন ব্যক্তির মস্তিষ্ক বিকল হইয়া উঠে। মকদ্দমা উপস্থিত হইলে, এইরূপ আইনজ্ঞ বন্ধুর কিছুমাত্র অভাব হয় না। কাব্যের, চিত্রপটের, সঙ্গীতের, অভিনয়ের - বিচারক নন, এমন কাহাকেও খুজিয়া পাইবেন না ; কিন্তু যদি কোন বিজ্ঞ বন্ধুকে বলেন,—“ভাই এই ঠিকৃটে দেখ’ত।” দেখবেন, সে বন্ধুর বড় ঠিক দেওয়া অভ্যাস নাই; লেখা নকল করা সম্বন্ধেও সেইরূপ ; অতি সামান্য সামান্য কাৰ্য্য যাহা দশ টাকা বেতনভোগী ব্যক্তি দ্বারা হইয়া থাকে, তাহাতে অনেকেই অপটু ৷ পাঠক মনে ভাবিতেছেন, যাহাদের মস্তিষ্ক উপরোক্ত উচ্চ বিষয় সকলে চালিত, ক্ষুদ্র বিষয় ত তাহাদের দ্বারা হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পাঠক কি এই সকল পণ্ডিতদের চেনেন না ? এরা লেখাপড়ার ধার বড় কমই ধারেন, ইহাদের ভিতর অনেকেই দশ পনের টাকা বেতনের চাকরির উমেদার, কেবল তীক্ষু বুদ্ধির প্রভাবে ঐ সমস্ত উচ্চ বিষয় অধিকার করিয়াছেন। তাহদের মধ্যে আবার র্যাহার কিঞ্চিৎ পড়াশুনা করিয়াছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয়শ্রেণীর উপাধিধারী, তাহাদের স্পৰ্দ্ধার সীমায় আকাশ-সীমাও মৃন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিন্দা করিতেছি না, আমাদের দেশে গৌরবান্বিত যিনি হন—প্রায়ই র্তাহারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী, তাহারা আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন। আমরা যে উপাধিবিশিষ্ট স্পৰ্দ্ধাবান ব্যক্তির উল্লেখ করিতেছি,—ইহারা তাহাদের নিকট পরিচিত, অতএব উল্লিখিত সৰ্ব্বজ্ঞ পরম বিজ্ঞেরা যে আদর্শ স্বদেশ-গৌরব, উদয়োম্মুখী প্রতিভাশালী ব্যক্তি নন-ইহা আমাদের বলা বাহুল্য । ঐ পরম বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সর্বজ্ঞতার পরিচয় দিবার কারণ অনেক। প্রায়ই র্তাহারা সকলে উপজীবিকাহীন বা সামান্য বেতনভোগী। বড়লোকের তোষামোদ ও বড়লোকের প্রতিষ্ঠালাভ তাহাদের প্রধান উদেশ্ব। অমূলব কতকগুল কথায় ও অনধিকার চচ্চর্ণয়, অকৰ্ম্মণ্য জীবনে সময়াতিপাত করাও আর এক উদ্দেশ্য । বলা হইয়াছে, সকল কঠিন বিষয়েই, ইহাদের সম্পূ অধিকার। সুতরাং কঠিন রাজনৈতিক বিষয়েও ইহার বিশেষ পারদর্শী। যদি কোন রকমে একট ছাপাখানার যোগাড় করিতে পারেন, অমনি একখানি সংবাদপত্র বাহির করিয়া তাহার সম্পাদক হন পূৰ্ব্বেই তো সব জানিতেন, পূৰ্ব্বেই তো সকল বিষয়ের উঃ দেষ্ট ছিলেন, এখন কালি-কলম ও মুদ্রাযন্ত্ৰ পাইয় তাহাদের উপদেশপ্রদায়িনী শক্তি বড় ভীষণ হইয়া উঠিল