নিকুঞ্জে দখিনাবায় করিছে হায়-হায়,
লতাপাতা দুলে দুলে ডাকিছে ফিরে ফিরে।
দুজনের আঁখিবারি গোপনে গেল বয়ে,
দুজনের প্রাণের কথা প্রাণেতে গেল রয়ে।
আর তো হল না দেখা, জগতে দোঁহে একা—
চিরদিন ছাড়াছাড়ি যমুনাতীরে।
৩৩
দেখায়ে দে কোথা আছে একটু বিরল।
এই ম্রিয়মাণ মুখে তোমাদের এত সুখে
বলো দেখি কোন্ প্রাণে ঢালিব গরল।
কিনা করিয়াছি তব বাড়াতে আমোদ—
কত কষ্টে করেছিনু অশ্রুবারি বোধ।
কিন্তু পারি নে যে সখা— যাতনা থাকে না ঢাকা,
মর্ম হতে উচ্ছ্বসিয়া উঠে অশ্রুজল।
ব্যথায় পাইয়া ব্যথা যদি গো শুধাতে কথা
অনেক নিভিত তবু এ হৃদি-অনল।
কেবল উপেক্ষা সহি বলল গো কেমনে রহি।
কেমনে বাহিরে মুখে হাসিব কেবল।
৩৪
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর-একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।
মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়—
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়—
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়।