পাতা:গীতবিতান.djvu/১০২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গীতপঞ্চাশিকা - ‘মায়ার খেলা’
৮৯৭

৬৩

তরুণ প্রাতের অরুণ আকাশ শিশির-ছলোছলো,
নদীর ধারের ঝাউগুলি ওই রৌদ্রে ঝলোমলো।
এমনি নিবিড় করে এরা  দাঁড়ায় হৃদয় ভ’রে—
তাই তো আমি জানি  বিপুল  বিশ্বভুবনখানি
অকূল-মানস-সাগর-জলে কমল টলোমলো।
তাই তো আমি জানি—  আমি  বাণীর সাথে বাণী,
আমি  গানের সাথে গান,  আমি  প্রাণের সাথে প্রাণ,
আমি  অন্ধকারের হৃদয়-ফাটা আলোক জ্বলোজ্বলো।

৬৪

জলে-ডোবা চিকন শ্যামল  কচি ধানের পাশে পাশে
ভরা নদীর ধারে ধারে  হাঁসগুলি আজ সারে সারে
দুলে দুলে ওই-যে ভাসে।
অমনি করেই বনের শিরে  মৃদু হাওয়ায় ধীরে ধীরে
দিক্‌রেখাটির তীরে তীরে  মেঘ ভেসে যায় নীল আকাশে।
অমনি করেই অলস মনে আমার তরীর কোণে
মনের কথা সারা সকাল  যায় ভেসে আজ অকারণে।
অমনি করেই কেন জানি  দূর মাধুরীর আভাস আনি
ভাসে কাহার ছায়াখানি  আমার বুকের দীর্ঘশ্বাসে।

৬৫

স্বপনলোকের বিদেশিনী  কে যেন এলে কে
কোন্  ভুলে-যাওয়া বসন্ত থেকে।
যা-কিছু সব গেছ ফেলে  খুঁজতে এলে  হৃদয়ে,
পথ চিনেছ চেনা ফুলের  চিহ্ন দেখে।
বুঝি  মনে তোমার আছে আশা
কার হৃদয়ব্যথায় মিলবে বাসা।